বিক্ষিপ্ত বনসৃজন নয়, অরণ্যচারীদের হাতেই দেওয়া যেতে পারে ‘আশ্রয়’রক্ষার দায়িত্ব

সারা বিশ্বে সামাজিক বনসৃজন এখন এক বিকল্প পৃথিবীর স্বপ্ন বুনছে। বড় বড় জঙ্গল যখন প্রায় নিঃশেষ হয়ে আসছে তখন এইসব মানবিক উদ্যোগই প্রয়োজন। পাশাপাশি শুরু হয়েছে বড়ো বনভূমি সংরক্ষণের কাজও। তবে এই কাজও যে নিছক একটা বনসৃজন প্রকল্প না হয়ে সামগ্রিকভাবে সামাজিক উদ্যোগ হয়ে উঠতে পারে, তেমন কথা ভেবেছেন অনেকেই। আর সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান করতে সামাজিক মানুষকেই জুড়ে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করলেন একদল গবেষক।

বিগত ৫০ বছর ধরে অরণ্য, বিশেষ করে ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য ক্রমশ তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। এখনও সেই ক্ষয় বেড়ে চলেছে। তবে এর মধ্যেই কিছু মানুষ ও সংস্থা এগিয়ে এসেছেন সেইসব হারিয়ে যাওয়া অরণ্য উদ্ধার করতে। কিন্তু অরণ্যকে ঘিরে থাকা মানুষদের দিয়েই যে এই কাজটা করানো যায়, তেমনটা হয়তো ভাবেননি অনেকেই। এই ব্যতিক্রমী ভাবনাকেই উস্কে দিতে চাইছেন ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস, ডার্টমাউথ কলেজ, মিশিগান ইউনিভার্সিটি, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটি এবং শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা।

সেই সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষের জীবন গড়ে উঠেছে অরণ্যকে ঘিরে। কেউ কেউ তার থেকে বেরিয়ে এলেও অনেকেই এখনও সেই জীবন ছেড়ে আসতে পারেননি। ক্রমশ বনভূমি কমে আসায় বিপদে পড়েছেন তাঁরা। নেই বিকল্প জীবিকার সুযোগও। এমন অবস্থায় বনসৃজন প্রকল্পের সঙ্গে এইসব মানুষদের যুক্ত করে নিলে তাঁদেরও যেমন উপার্জনের রাস্তা খুলে যাবে, তেমনই তাঁরা দক্ষ হাতে বনভূমির রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবেন। গবেষণার রিপোর্ট বলছে পৃথিবীর ২৯৪.৫ মিলিয়ন মানুষ এই কাজের জন্য উপযুক্ত। শুধু তাঁরা সুযোগ পাচ্ছেন না।

ক্রান্তীয় ও নিরক্ষীয় বৃষ্টি অরণ্যকে ঘিরে যে জটিল বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে, তার বিপন্নতাই ডেকে আনছে অসংখ্য রোগের প্রকোপ। সেইসঙ্গে জলবায়ুর বদলের সঙ্গেও আর মানিয়ে নিতে পারছে না মানুষ সহ জীবজগত। কিন্তু ইতিহাস তার পিছন দিকে যায় না। তাই সমাজের প্রগতির মধ্যেই উত্তর খুঁজতে হবে। আর এই পরিস্থিতিতে সমস্ত মানুষের সার্বিক অংশগ্রহন একান্ত জরুরি। ব্রাজিল, কঙ্গো, ইন্দোনেশিয়া এমনকি ভারতের বনভূমির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য উপজাতির জীবন। যাদের অনেকেরই অর্থনৈতিক অবস্থা রীতিমতো শোচনীয়। নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র যদি সেইসব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে পৃথিবীকে আবার সবুজ করে তোলার স্বপ্ন দেখাতে পারে, তাহলে সেই স্বপ্নকে সত্যি করে তোলার দায়িত্বও নিতে হবে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারকদের।

আরও পড়ুন
বাড়ির বাগানে ২০০ উদ্ভিদের পরিচর্যা, লকডাউনে সবুজ পৃথিবীর পাঠ দিচ্ছেন হায়দ্রাবাদের শিক্ষক

Powered by Froala Editor

Latest News See More