ছাত্রাবস্থায় নির্বাসিত এফটিআইআই থেকে, কানে শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্র নির্মাতা পায়েল

২০১৫ সাল। পুনের ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া’-র চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হলেন অভিনেতা গজেন্দ্র চৌহান। আর তারপরই যেন প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠল এফটিআইআই-জুড়ে। ক্লাস বয়কট, মিছিল, অবস্থান। প্রায় চার মাস ধরে চলেছিল সেই বিক্ষোভ। আর সেই আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন প্রথম বর্ষের ছাত্রী পায়েল কাপাডিয়া। এই প্রতিবাদী অবস্থানের জেরে তাঁর ওপরে নেমে এসেছিল কঠিনতম শাস্তি। বাতিল হয়েছিল স্কলারশিপ। বিশৃঙ্খলার অভিযোগে হতে হয়েছিল সাসপেন্ডও। এবার তাঁর জন্যই আন্তর্জাতিক মঞ্চে রীতিমতো গর্বের অংশীদার হল এফটিআইআই। কেননা পায়েলের নির্মিত তথ্যচিত্রই সম্প্রতি সেরা হিসাবে নির্বাচিত হল কান চলচ্চিত্র উৎসবে।

‘আ নাইট অফ নোয়িং নাথিং’। গত শনিবার ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে তথ্যচিত্র বিভাগে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান পেল পায়েল কাপাডিয়ার তৈরি এই ছবি। এই বিভাগে সব মিলিয়ে প্রায় কয়েকশো তথ্যচিত্র জমা পড়েছিল। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর স্ক্রিনিং হয়েছিল মাত্র ২৭টি তথ্যচিত্রের। সেখান থেকেই বিচারকরা পায়েলের এই ছবিটি বেছে নেন সেরা হিসাবে। 

তথ্যচিত্রের চেনা ছকের থেকে খানিকটা ভিন্ন ‘আ নাইট অফ নোয়িং নাথিং’। এই তথ্যচিত্রে প্রতিধ্বনিত হয়েছে আসলে প্রেমেরই উপাখ্যান। ‘ফাউন্ড ফুটেজ’ ধারার ওপর ভিত্তি করেই কাপাডিয়া তৈরি করেছেন তথ্যচিত্রটি। প্রেক্ষাপট সেই পুনের এফটিআইআই-ই। ‘এল’ এবং ‘কে’ নামের দুই প্রেমিক-প্রেমিকার চিঠি-পাল্টা চিঠি এবং বিভিন্ন পেপারকাটিং-কে সম্বল করেই নির্মিত তথ্যচিত্রটি। প্রেমের পাশাপাশি যেখানে প্রতিফলিত হয়েছে রাজনৈতিক দর্শনও।

তবে এই প্রথম নয়। কান চলচ্চিত্র উৎসবে এর আগেও প্রদর্শিত হয়েছিল পায়েলের ছবি। সেটা ২০১৭ সাল। পায়েল তখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে কানে সেবার জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। স্ক্রিনিং হয়েছিল তাঁর সংক্ষিপ্ত চিত্র ‘আফটারনুন ক্লাউডস’। সেবারেও তাঁর বিরুদ্ধে দমননীতি নিয়েছিল এফটিআইআই। তৎকালীন এফটিআইআই পরিচালক প্রশান্ত পার্থবেকে ঘেরাও করার জন্যই থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। যার পিছনে ছিল সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অভিঘাত। কিন্তু এভাবে সত্যিই কি দমানো যায় প্রতিভাকে? যায়নিও। তবে সেবছর তাঁর সিনেমা স্ক্রিনিং হলেও অধরা থেকে যায় পুরস্কার। এবার সেই স্বপ্নকে ছুঁয়ে ফেললেন পায়েল।

আরও পড়ুন
প্রথম চলচ্চিত্রের আগেই বানিয়ে ফেলেছিলেন পঞ্চাশেরও বেশি ছবি!

এর আগে ২০১৮ সালে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সামার সেইয়িং’ শর্টফিল্মের জন্য স্পেশাল জুরি প্রাইজ পেয়েছিলেন পায়েল। ২০১৫ সালে ওবারহাউসেন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘দ্য লাস্ট ম্যাঙ্গো বিফোর মনসুন’-এর জন্য পেয়েছিলেন ফিপ্রেসকি অ্যাওয়ার্ড। এবার সেই ইতিহাসেরই যেন পুনরাবৃত্তি হল কানে…

আরও পড়ুন
সত্যজিৎ-স্মরণে শর্টফিল্ম ফেস্টিভাল, আয়োজনে কলকাতার এক দল তরুণ চলচ্চিত্রকার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের সিনেমা

More From Author See More