‘দ্য বিটলস’ (The Beatles)। নামটা শুনলে আজও শিহরণ খেলে যায় যে-কোনো পাশ্চাত্য সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের শরীরে। ষাটের দশক। রূপকথার মতো উত্থান হয়েছিল এই ইংলিশ রক ব্যান্ডের। লিভারপুলের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছিল জন লেনন, পল ম্যাককার্টনি, জর্জ হ্যারিসন এবং রিঙ্গো স্টারের এই গানের দল। তৈরি করেছিল একাধিক কিংবদন্তি। তবে যেমন স্বপ্নের উত্থান, তেমনই আশ্চর্যজনকভাবে ভেঙে গিয়েছিল এই গানের দল। ১৯৭০ সালের ১০ এপ্রিল এক সাক্ষাৎকারে স্যার পল ম্যাককার্টনি প্রকাশ্যে এনেছিলেন সেই দুঃসংবাদ।
এরপর মার্সেই-এর বুক দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল। ব্রিটেন ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছেন লেনন (John Lennon)। সেখানেই তাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে এক ভক্তের হাতে। সেই অর্থে ‘বিটলস’-এর ফিরে আসা হয়নি আর কোনোদিনই। তবে ব্যান্ড ভেঙে যাওয়ার দীর্ঘ ৫৩ বছর পর এবার ফের সংগঠিত হতে চলেছে ‘দ্য বিটলস’। প্রকাশ্যে আসছে নতুন গান। কণ্ঠে স্বয়ং লেনন। সঙ্গীতসজ্জায় থাকছেন বাকিরাও।
এও কী হতে পারে? যে-মানুষটি পৃথিবী ছেড়েছেন অর্ধ-শতাব্দী আগে, তিনি কীভাবে কণ্ঠ দিতে পারেন নতুন কোনো গানে? এই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে ভক্তদের মনে। তবে এই আশ্চর্য কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে এআই, অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সম্প্রতি এক বিবিস রেডিও-এর এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন অন্যতম ‘বিটল’ স্যর পল ম্যাককার্টনি। কিন্তু কীভাবে সম্ভব হল এই আশ্চর্য গানটির নির্মাণ?
আসলে ‘দ্য বিটলস’ ভেঙে গেলেও, পল ও জনের বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় নিজের তৈরি বেশ কয়েকটি পলকে উৎসর্গ করে গিয়েছিলেন লেনন। শুধু গান বাঁধাই নয়, ঘরোয়াভাবে সেই গানগুলির রেকর্ডিং-ও করেছিলেন তিনি। ‘ফর পল’ লেখা সেই ক্যাসেট এতদিন সংরক্ষিত ছিল তাঁর স্ত্রী ইয়োকো ওনোর কাছে। সম্ভাব্য ১৯৭৮ সালে তিনি রেকর্ড করেছিলেন এই গানগুলি। ১৯৮০ সালে লেননের হত্যাকাণ্ডের পর ইয়োকো এই ক্যাসেট তুলে দেন পলের হাতে।
‘ফ্রি অ্যাজ আ বার্ড’ ও ‘রিয়েল লাভ’— ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে জনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘ফর পল’ ক্যাসেট থেকে এই দুটি গান নতুন করে প্রকাশ করেছিলেন পল ম্যাককার্টনি। সেটাই ছিল ২৫ বছর পর ‘বিটলস’-এর প্রত্যাবর্তন। অবশ্য সেই গানগুলিতে কণ্ঠ দিতে হয়েছিল পলকেই। অনুমান, ‘বিটলস’-এর প্রকাশিতব্য গানটিও এই ক্যাসেটেরই। সম্ভবত সেটির নাম ‘নাও অ্যান্ড দেন’। অবশ্য এ-কথা সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেননি পল ম্যাককার্টনি। বরং, খানিক রহস্যের মেঘ ছড়িয়ে রেখেছেন শ্রোতাদের জন্য। আর লেননের কণ্ঠ?
আসলে বছর কয়েক আগে ‘বিটেলস’-এর আর্কাইভ ফুটেজ পরিমার্জন করে ৮ ঘণ্টার একটি রঙিন তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’-এর পরিচালক পিটার জ্যাকসন। তিনি সে-সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে রিহার্সাল ও অন্যান্য ঘরোয়া আড্ডার রেকর্ডিং থেকে পৃথক করেছিলেন লেনন, ম্যাককার্টনি, রিঙ্গো স্টারের কণ্ঠ। সেই একই পদ্ধতিতে এবার লেননের রেকর্ড করে যাওয়া ঘরোয়া ক্যাসেট থেকে পৃথক করা হয়েছে লেননের কণ্ঠস্বর। সেই কণ্ঠস্বরকে সামনে রেখেই সঙ্গীতসজ্জা করেছেন বিটলসের অবশিষ্ট সদস্যরা। বসিয়েছেন বাদ্যযন্ত্র ও অন্যান্য শব্দ। তাতেই পূর্ণতা পেয়েছে এই গানটি। পলের কথায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক খারাপ দিক রয়েছে, তবে সেটাকে বর্জন করে ভালোটা বেছে নেওয়াই মানুষের কাজ। দেখতে হবে সভ্যতা কোন দিকটাকে বেছে নেয়। লেননকে যে-এভাবে ফিরিয়ে দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সে-ব্যাপারে স্বপ্নেও কোনোদিন চিন্তা করতে পারেননি বলেই জানাচ্ছেন তিনি। অবশ্য ঠিক কবে প্রকাশিত হবে এই গান, সে-ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে এখনও কোনো ঘোষণা করেনি ‘বিটলস’।
Powered by Froala Editor