প্রতিযোগিতার ইঁদুরদৌড়ে হারিয়ে যাচ্ছে সংস্কৃতি, হারিয়ে যাচ্ছে ভাষা। আর কে না জানে, কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে গেলে চৌখস হতে হবে। হতে হবে ইংরাজি বলিয়ে-কইয়ে স্মার্ট। তাই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাংলা মাধ্যম স্কুলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অভিভাবকরা। বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে ভয়ানকভাবে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কলকাতা শহর ও শহর ছাড়িয়ে গ্রাম মফস্বলে গজিয়ে উঠছে বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুল।
এরকম অবস্থায় কলকাতার পাঠভবন স্কুলের বাংলা মাধ্যমটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ প্রাক্তনী থেকে শহরের অন্যান্য চিন্তাশীল মানুষ। ১৯৬৫ সালে বিশ্বভারতীর পাঠভবন স্কুলের নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই স্কুলটি। শুরু থেকেই বাংলা ও ইংরাজি উভয় মাধ্যমেই শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকলেও স্কুলের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ধারাকে ধরে রাখা। উমা সেহানবীশ থেকে সত্যজিৎ রায়, উদ্যোক্তারা চেয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বেঁচে থাকবে বাংলার সংস্কৃতির বীজ এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রবণতা। বাংলা মাধ্যমটি বন্ধ হয়ে গেলে সেই প্রাথমিক লক্ষ্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
স্কুল কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষা শুভা গুপ্তের কথায়, অভিভাবকরাই তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াতে চাইছেন ইংরাজি মাধ্যমে। আগে প্রতিটি ক্লাসে তিনটি করে বাংলা মাধ্যম ও দুটি করে ইংরাজি মাধ্যম সেকশন থাকত। সেখান থেকে কমে বাংলা মাধ্যমের একটি সেকশনে এসে দাঁড়ায়। তাতেও পড়ুয়ার সংখ্যা মেরেকেটে পনেরো। অভিভাবকদের চাপেই কর্তৃপক্ষ এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। যদিও প্রাক্তনীদের একাংশের অভিযোগ, সাধারণ মানুষ এমনকি অভিভাবকদেরও সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বছর দুয়েক আগে এমনই পরিস্থিতিতে কলকাতার ৭৫টি সরকারি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল 'বিদ্যালয় শিক্ষা পর্ষদ'। সেই সময়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শহরের ৪৫৮টি স্কুলের মধ্যে ১৫২টি স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ বা তার কম। ব্রাহ্ম বয়েজ স্কুল, বঙ্গবাসী কলেজিয়েট স্কুল ও কুমার আশুতোষ ইনস্টিটিউটের মতো ঐতিহ্যবাহী স্কুলগুলিতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৬, ১ ও ১। লাভ হয়নি 'সর্বশিক্ষা অভিযানে'র ফলেও।