বড়ো বাঁধের সংখ্যার হিসাবে আমেরিকা এবং চিনের পরেই ভারতের অবস্থান। অথচ এত বেশি বাঁধ থাকার পরেও ভারতে এতদিন বাঁধ সুরক্ষা সংক্রান্ত কোনো আইন ছিল না। ৩৪ বছর আগেই এই সংক্রান্ত আইন পাশ করার প্রস্তাব ওঠে পার্লামেন্টে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানা জটিলতার কারণে বারবার পিছিয়েছে সময়। ৩৪ বছর পর অবশেষে বাঁধ ও জলাধার সুরক্ষা আইন পাশ হল। গত বৃহস্পতিবার সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পাশ হয় আইন। তবে এর মধ্যেই আইনটিকে ঘিরে উঠেছে নানা বিতর্ক। কেন্দ্রীয় নীতির অবর্তমানে বিভিন্ন রাজ্য নিজেদের মতো বাঁধ ও জলাধার সুরক্ষা সংক্রান্ত নীতি নিয়েছে ইতিমধ্যে। পাবলিক সেক্টরগুলিরও নিজস্ব নীতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় সেগুলির সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা না করে নতুন কেন্দ্রীয় আইন নিয়ে আসায় রাজ্যের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ এনেছেন বিরোধীরা।
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী জল ও জলসুরক্ষা রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়। কিন্তু যেহেতু একটি বাঁধ বা জলাধারের ওপর নদীর গতিপথে থাকা সমস্ত রাজ্যই প্রবাহিত হয়, তাই এই বিষয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপও সংবিধানসঙ্গত। আর সেই জায়গা থেকেই রাজ্যসভায় পাশ হল আইনটি। ১৯৮৭ সালে প্রথম বাঁধ সুরক্ষা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইনের প্রস্তাব দেওয়া হয় সংসদে। তবে আইনের প্রথম খসরা তৈরি হয় ২০১০ সালে। সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির বক্তব্যের নিরিখে বাতিল হয়ে যায় সেই খসরাও। এরপর ৩ বছর পর নতুন খসরা তৈরি হয়। কিন্তু লোকসভায় সেই আইন পাশ করার আগেই সরকার বদলে যায়। তারপর আবার বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। ২০১৯ সালে আবার নতুন করে লোকসভায় আইনের খসড়া পেশ করা হয়। লোকসভায় পাশ হয়ে গেলেও করোনা অতিমারীর কারণে রাজ্যসভার বৈঠকে বাধা পড়ে। অবশেষে সেইসব জটিলতা পেরিয়ে পাশ হল বাঁধ ও জলাধার সুরক্ষা আইন।
২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশের ২৯৩টি বাঁধের বয়স ১০০ বছরের বেশি। এছাড়াও ১০৪১টি বাঁধের বয়স ৫০-১০০ বছর। এর মধ্যে অনেক বাঁধের কার্যক্ষমতার মেয়াদ ফুরিয়েছে। অনেক বাঁধের মেয়াদ ফুরানো আসন্ন। এক একটি বাঁধের মেয়াদ ফুরালে সেই অঞ্চলের মানুষের জীবনও বিপন্ন হয়ে ওঠে। তীব্র জলসংকট দেখা দেয়। এমনিতেই জলসংকট বর্তমান ভারতে এক জ্বলন্ত সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রীয় আইন কতটা সফল হয়, আপাতত সেটাই দেখার বিষয়।
Powered by Froala Editor