‘ওঁরা জানেন না, শ্রমজীবী নারীদিবস কাকে বলে। নাগরিক মানুষের উৎসব থেকে তাঁদের বাস অনেক দূরে। সমস্ত জীবনই তো কেটে যায় লড়াই করতে করতে।’ বলছিলেন ‘মৈত্রেয়’ গোষ্ঠীর উদ্যোক্তা সপ্তর্ষি বৈশ্য। ভারতের ৭৫টি বিপন্ন আদি জনগোষ্ঠীর একটি বিরহড়। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় এখন তাঁদের সংখ্যা ৫০০ জনেরও কম। তবে বিগত দেড় বছর ধরে বিরহড়দের মধ্যেই কাজ করে চলেছে ‘মৈত্রেয়’। আর আজ নারীদবসের দিনে বিরহড় মহিলারাই নিয়ে এলেন নতুন উপহার, পেঁপের আচার।
‘আম, জামের মতো মরশুমি ফলের মতোই পেঁপে দিয়েও আচার তৈরি করা যায়। তবে ভারতে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে পেঁপের আচার তৈরি হচ্ছে।’ জানালেন ‘মৈত্রেয়’ গোষ্ঠীর আরেক সদস্য প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ‘মৈত্রেয়’ গোষ্ঠীর পথচলা শুরু। এর আগেই একার উদ্যোগে পুরুলিয়া ঘুরেছেন সপ্তর্ষি বৈশ্য। সরকারি নথির সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে গিয়ে দেখেছেন অনেক তথ্যই ভুল আছে। আর এরপরেই পরিচিত মানুষদের নিয়ে শুরু করে দিলেন কাজ।
‘বিরহড়রা মূলত শিকারি এবং সংগ্রাহক সম্প্রদায়ের উপজাতি। সরকার তাদের জমি দিলেও কীভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায় সেটাই বুঝতে পারতেন না তাঁরা।’ সপ্তর্ষি বৈশ্য আরও বলছিলেন, ‘আমরা প্রথমে জামাকাপড় বিতরণ শুরু করলেও কিছুদিনের মধ্যেই রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনা এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা থেকে বুঝতে পারি, আসলে ওঁদের স্বাবলম্বী করে তুলতে না পারলে কিছুই হবে না। এখন তাই তাঁদের নিজেদের মতো করে কৃষিকাজে সাহায্য করে চলেছি। গ্রামে স্কুলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর বিশেষ করে মহিলাদের নিয়ে তৈরি ‘বেসড়া বিরহড় মহিলা মৈত্রেয় সমিতি’ নানা ধরণের ছোটো ছোটো উদ্যোগ নিয়েই চলেছে।’ প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য জানালেন, ‘সপ্তর্ষিদার সঙ্গে প্রথম বেসড়ায় গিয়েই বুঝতে পারি পিছিয়ে পড়া জনজাতি বললেই আমরা যেমন ভাবি, বাস্তবটা আসলে সেরকম নয়। কী অসাধারণ তাঁদের কাজ করার ক্ষমতা। আর জঙ্গল থেকে বাঁশ, আমড়া দিয়েই তাঁরা বানিয়ে ফেলেন আচার। আমরা সেইসব আচার বাজারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিই। তারপরেই মনে হয়, পেঁপের জোগান তো সারা বছরই পাওয়া যায়। তাই পেঁপের আচার তৈরি করলে একটা নতুন জিনিসও হবে, আবার তার জোগানও থাকবে সারা বছর।’
‘আদিবাসীদের মধ্যে কিন্তু পুরুষদের থেকে মহিলারাই বেশি কাজে এগিয়ে আসেন। আর তাঁদের স্বনির্ভর করে তুলতে পারলে সামগ্রিকভাবে জনজাতির চেহারাটাই অনেকটা বদলে যাবে,’ মনে করছেন প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য। পাশাপাশি তাঁদের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করার জন্য প্রশাসনকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। ‘তবে আমরা কোনোদিনই চাই না নাগরিক জীবনের ছাপ পড়ুক বিরহড় মানুষদের উপর। তাঁরা নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের জীবন নিয়েই বেঁচে থাকুন। শুধু প্রতিযোগিতার দৌড়ে তাঁরা যেন হারিয়ে না যান, এটুকুই উদ্দেশ্য।’ বললেন সপ্তর্ষি বৈশ্য।
আরও পড়ুন
সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার করেই আদিবাসী মহিলাদের জন্যে লড়াই ওড়িশার জয়ন্তীর
নারীদিবস মানে শুধু ‘গয়নার মজুরিতে ছাড়’ নয়, এই দিনটি মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের একটা অঙ্গ। বিরহড় মহিলাদের নিয়ে সেই বার্তাই দিতে চাইছে ‘মৈত্রেয়’।
আরও পড়ুন
ঋতুকালীন কিশোরীদের স্বাস্থ্যবিধির পাঠ দিচ্ছেন আদিবাসী মহিলারাই
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আদিবাসীদের দাবি মেনে ঐতিহ্যে বদল, এবার দশেরায় কাটা পড়বে না একটিও গাছ