একসময়ের জনপ্রিয় এক বাংলা গানে ছিল ‘পাখিদের পাঠশালা’-র কথা। তবে সেখানে সুরেলা কণ্ঠশিল্পীদের সঙ্গে সঙ্গত দেওয়ার জন্য উপস্থিত ছিল না কেউই। বাংলার বুকে এমন পাখির অস্তিত্ব না থাকলেও ভারত মহাসাগর পেরিয়ে দক্ষিণে গেলেই এমন পাখির সন্ধান পাওয়া যাবে। হয়তো দেখা যাবে কোনো নেড়া গাছের ডালে বসে একমনে আরেকটা ডাল দিয়ে তাল ঠুঁকছে। অবাক লাগবে নিশ্চই এমন একটা পাখির হদিশ পেলে! তবে অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপকূল থেকে পাপুয়া-নিউগিনি জুড়ে ছড়িয়ে আছে এমনই এক অদ্ভুত কাকাতুয়ার বাসস্থান। চলতি ভাষায় যে পাখির নাম পাম কাকাতুয়া।
ঘন কালো বা ধূসর গায়ের রঙের জন্য অনেকে একে ব্ল্যাক কাকাতুয়াও বলে থাকেন। আর সম্ভবত এই পাম কাকাতুয়াই একমাত্র পাখি যে খাদ্য বা বাসস্থানের প্রয়োজন ছাড়াই কোনো ধরণের যন্ত্র তৈরি করে। এই পুরুষ কাকাতুয়ারা তাদের শক্ত ঠোঁট দিয়ে গাছের ডাল কেটে তৈরি করে ঠিক ড্রামস্টিকের মতো একটি দণ্ড। আর সেই ডাল গাছের গায়ে ঠুঁকে তাল তৈরি করে। অবশ্য উদ্দেশ্য যে একেবারে নেই, তা নয়। পুরুষ পাম কাকাতুয়া এই তাল তৈরি করে নারীদের আকর্ষণ করার জন্য। একমাত্র প্রজনন ঋতুতেই পাম কাকাতুয়াদের এভাবে তাল তৈরি করতে দেখা যায়।র
তবে পাম কাকাতুয়ার সংখ্যা নিয়ে সম্প্রতি বেশ উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। যদিও পরিবর্তিত জলবায়ুর কোনো প্রভাব এখনও পাম কাকাতুয়ার প্রজননচক্রের উপর পড়েনি। দুবছরে একটি ডিম পাড়তে দেখা যায় পাম কাকাতুয়াকে। তবে ক্রমাগত দাবানল এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অনেক ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এমনও দেখা গিয়েছে, একটি দম্পতি ১০ বছরেও কোনো সন্তানের জন্ম দিতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে তাদের সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যেই হারিয়ে যেতে চলেছে প্রাণীজগতের এক বিস্ময়।
Powered by Froala Editor