বয়স হয়েছে ৬১ বছর। তবু কোনো ক্লান্তি নেই শরীরে। রোজ সকালে উঠে ব্যাগভর্তি বই নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। দুটি পঞ্চায়েতের সমস্ত গ্রাম ঘুরে ঘুরে মানুষের কাছে পৌঁছে দেন সেইসব বই। আবার তাঁদের পড়া হয়ে যাওয়া বইগুলি ফিরিয়ে আনেন। এভাবেই কেটে গিয়েছে জীবনের ৪১টা বছর। কেরালার কারুভত্তা গ্রামের বাসিন্দা পি সুকুমারন। প্রতিদিন ১২ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হাঁটাই যাঁর কাজ। এলাকার একজন জীবন্ত লাইব্রেরিয়ান (Living Library) সুকুমারন (P Sukumaran)। তবে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিতে চলেছেন তিনি। অবসর নিলেও ঘরে বসে থাকতে পারবেন কি? জানেন না তিনি। হয়তো নিজের তাগিদেই আবার বেরিয়ে পড়বেন বইয়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে।
৪১ বছর আগে কুমারপুরম পাবলিক লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগারিক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন সুকুমারন। তখন সদ্য গড়ে উঠেছিল লাইব্রেরিটি। প্রথম প্রথম পাঠকের ভিড় হত ভালোই। কিন্তু ক্রমশ সেই সংখ্যাটা কমতে থাকে। অনেকেই ভেবেছিলেন, মানুষ বুঝি বই পড়তেই চাইছেন না। তবে সুকুমারন সেটা মানতে চাননি। বরং তাঁর মনে হয়, যে সমস্ত মহিলারা সারাদিন ঘরে বন্দি হয়ে থাকেন, তাঁরা নিশ্চই বই পড়তে চান। আর ছোটোদের তো বই পড়ার আগ্রহ থাকবেই। তবে এই বড়ো সংখ্যার পাঠকদের লাইব্রেরিমুখী হওয়ার সুযোগ নেই। সামাজিক ব্যবস্থা সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু লাইব্রেরি নিজেই কি পৌঁছে যেতে পারে না পাঠকদের দরজায়?
এভাবেই কাজ শুরু করেছিলেন সুকুমারন। দেখতে দেখতে তাঁর পাঠকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে কুমারপুরম এবং কারুভত্তা পঞ্চায়েত মিলিয়ে ৩৫টি বাড়ির মহিলা এবং শিশুরা তাঁর বইয়ের নিয়মিত পাঠক। মাঝে মাঝে আশেপাশের বাড়ি থেকেও ডাক আসে তাঁর। শুধু বাড়িতে বই দিয়ে এসেই তাঁর কাজ শেষ হয় না অবশ্য। সেইসঙ্গে বই নিয়ে আলোচনা চলে পাঠকদের সঙ্গে। খুদে পাঠকদের থেকে জেনে নেন, তাদের কেমন লাগল বই। তাদের পছন্দ অনুযায়ী নতুন বইয়ও বেছে নিয়ে যান তিনিই। কখনও কখনও তাঁর ছোটোবেলায় পড়া কোনো বইয়ের গল্প শোনান তাদের।
রোজ সকাল সাড়ে ৮টায় লাইব্রেরিতে হাজির হন সুকুমারন। তারপর ৬০-৭০টি বই বাছাই করে সাড়ে ১০টা নাগাদ বেরিয়ে পড়েন তিনি। বাড়ি থেকেই দুপুরের খাবার টিফিনবক্সে নিয়ে আসেন। দুটি পঞ্চায়েত অঞ্চল পায়ে হেঁটেই ঘোরেন সুকুমারন। সাইকেল চালানো শেখা হয়নি কোনোদিন। আর অন্য কোনো যানবাহন তাঁর ভালো লাগে না। হাঁটতে হাঁটতে আশেপাশের রাস্তাঘাট, প্রকৃতির সঙ্গে একটা নিবিড় সম্পর্ক অনুভব করেন তিনি। প্রকৃতির এই স্পর্শটুকু, আর পাঠকদের সঙ্গে সময় কাটানোর অবসরটুকু ছাড়া তিনি কি থাকতে পারবেন এবার? হয়তো ব্যাগভর্তি বই নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়বেন সুকুমারন।
আরও পড়ুন
সাম্প্রদায়িক বৈষম্য দূর করতে ‘মানব লাইব্রেরি’ যুক্তরাষ্ট্রে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পুলিশের উদ্যোগে, ৪৫০০ বই নিয়ে আউটপোস্টেই তৈরি লাইব্রেরি