দেশে শুরু হয়ে গেছে গণ-টিকাকরণ। কিন্তু তার পরেও হঠাৎ শিখরে পৌঁছল সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন ১ লক্ষ ৩ হাজার ৭৯৩ জন মানুষ। যা সর্বকালীন সর্বোচ্চ সংক্রমণ ভারতীয় ভূখণ্ডে। সেইসঙ্গে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় পাঁচশো ছুঁই ছুঁই। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ৪৭৭ জন মানুষ।
১৬ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ ৯৭ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন ভারতে। তারপর থেকেই ক্রমশ নিম্নমুখী ছিল দেশের সংক্রমণের গ্রাফ। এমনকি দেশের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা নেমে এসেছিল ১০ হাজারে। তবে গত সপ্তাহ থেকেই ফের লাফিয়ে বাড়ছিল ভাইরাসের সংক্রমণ। এবার তৈরি হল ভয়ঙ্করতম পরিস্থিতি।
গত আগস্ট থেকেই ধাপে ধাপে শিথিল করা হয়েছিল লকডাউন। রেল, সড়কপথেও বেশ হালকা করে দেওয়া হয়েছিল বিধিনিষেধ। এমনকি চলতি বছরের একদম শুরুর দিকেই অধিকাংশ রাজ্যে খুলে গিয়েছিল স্কুল-কলেজ। তবে বার বার সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হয়েছিল দূরত্ববিধি মেনে চলার জন্য। কিন্তু তা কি সত্যিই সম্ভব ছিল? পুরোদমে কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি খুলে যাওয়ায় রাস্তায় নেমেছিল জনস্রোত। দেশের সর্বত্রই ট্রেনে-বাসে দেখা গেছে বাদুড়ঝোলা ভিড়। প্রথমে কিছুদিন কড়াকড়ি থাকলেও তারপর ঢিলে দিয়েছিল প্রশাসনও। আর সেই গা-ছাড়া মনভাবই কি ডেকে আনল দেশের বিপদ? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সেখানেই।
সারা ভারতে যখন সংক্রমণ ১ লক্ষ ছুঁল, তখন বাংলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৫৭ জন। অর্থাৎ, তার আগের দিনের থেকে এক ধাক্কায় আড়াইশো বাড়ল আক্রান্তের সংখ্যা। তবে চিন্তার কারণ শুধু সংক্রমণের ব্যাপকতা নয়; চিকিৎসকদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে সংক্রমণের হার বা পজিটিভিটি রেশিও। যেখানে দেশের সর্বকালীন সংক্রমণের হার ৫.০৩ শতাংশ, সেখানে শুধু গতকালই এই হার ছিল ৭.৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ, বর্তমান পরিস্থিতি জানান দিচ্ছে পুনরায় গোষ্ঠী সংক্রমণের দিকেই হাঁটছে ভারত। এসে পড়েছে কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ।
আরও পড়ুন
টিকা নিলেই নিশ্চিন্ত নয়, আবারও ঘটতে পারে করোনা সংক্রমণ
এই পরিস্থিতিতে বাংলায় চলছে নির্বাচন। বুথ কেন্দ্রে দূরত্ববিধি আরোপ করা হলেও, প্রচারের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের তরফে কি ন্যূনতম সতর্কতা দেখা গিয়েছিল? লক্ষ লক্ষ মানুষ পথে নেমেছিলেন রাজনৈতিক প্রার্থীদের সমর্থনে। যার আরও বাড়িয়ে তুলেছে সংক্রমণের প্রবণতা। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সঙ্গে চোখে পড়েছিল মানুষের অসচেতনতাও। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলায় মাস্কের ব্যবহার প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে।
চিকিৎসকদের ধারণা, নির্বাচনের কারণে পশ্চিমবঙ্গে ঠিক মতো কোভিড টেস্টও হচ্ছে না। ফলে বাস্তবে সংক্রমণের সংখ্যা আরও বেশ খানিকটা বেশি পরিসংখ্যানের থেকে। এখন দেখার এই ভোটের মরশুমে ঠিক কতটা তৎপর হয়ে পদক্ষেপ নেয় সরকার। মহারাষ্ট্রে ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গেছে নাইট কার্ফিউ। পশ্চিমবঙ্গও কি হাঁটবে সেই পথেই? এখন সেটাই দেখার…
আরও পড়ুন
গায়ত্রী জপে সারবে করোনা! এইমস-কে গবেষণার নির্দেশ কেন্দ্রের
Powered by Froala Editor