২০১৫ সালের অস্কার পুরস্কার নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের কথা নিশ্চয়ই অনেকেরই মনে আছে। সেরা অভিনেতা হিসাবে মনোনীত প্রতিটি নাম ছিল সাদা চামড়ার আমেরিকা এবং ইউরোপবাসীদের থেকে। তখন একটি কথা ছড়িয়ে পড়েছিল মুখে মুখে। ‘অস্কার ইজ টু হোয়াইট’। বিতর্কের মধ্যেই ২০১৬ সালে আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল। তবে এইবার মনোনয়ন তালিকায় নাম ওঠার বিষয়ে বেশ কিছু নিয়ম জারি করতে চলেছে অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স। বিশেষ করে সেরা চলচিত্র হিসাবে নাম তুলতে গেলে তার মধ্যে বৈচিত্র্যের ইঙ্গিত দিতেই হবে। আর অ্যাকাডেমির এই ঘোষণার পিছনে মূল চালিকা শক্তি যে আমেরিকা থেকে শুরু হওয়া ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন, সেকথা বলাই বাহুল্য।
কোনো সিনেমা তার নির্মাণের মধ্যে বৈচিত্রময় জীবনকে তুলে ধরা হয়েছে কিনা, সেটা বুঝতে সমস্ত সিনেমাকে ৪টি শ্রেণীতে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে। প্রথম শ্রেণীতে থাকবে সেইসমস্ত সিনেমা, যার গল্পে এবং কাহিনিতে অবদমিত জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষের কথা বলা হয়েছে। এখানে মূল চরিত্রদের মধ্যে অন্তত ২ জনকে এবং বাকি চরিত্রের অন্তত ৩০ শতাংশকে কোনো ধরনের অবদমিত জাতি বা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। দ্বিতীয় শ্রেণীতে আছে সেই সমস্ত সিনেমা, যার প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত ইউনিটে অবদমিত সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তৃতীয় শ্রেণীর সিনেমা তার বৌদ্ধিক ভূমিকার পাশাপাশি অবদমিত সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নিয়ে থাকবে। এবং চতুর্থ শ্রেণীর সিনেমার আবেদন নানা ধরনের দর্শকের কাছে সমান হবে। কোনো সিনেমাকে সেরা সিনেমা হিসাবে অস্কারের মনোনয়ন তালিকায় নাম তুলতে গেলে এই চার শ্রেণীর অন্তত ২টির মধ্যে তাকে পড়তে হবে।
অ্যাকাডেমির প্রেসিডেন্ট ডেভিড রুবিন মনে করছেন, অস্কারের মতো পুরস্কারের জন্য সমস্ত চলচ্চিত্র নির্মাতাই মুখিয়ে থাকেন। তাই সেখানে এই নিয়ম লাগু হওয়ায় তাঁরা সিনেমার জগতে সমস্ত মানুষের সমানাধিকারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবেন। ইতিমধ্যে নানা স্টুডিওতে এধরনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন সিইও ডন হাডসন। তিনি জানিয়েছেন, ২০২২ সাল থেকেই সমস্ত মনোনীত সিনেমার ক্ষেত্রে এই শ্রেণীগুলির উল্লেখ করতে হবে। তবে ২০২৪ সাল থেকেই পুরস্কারের জন্য এই নিয়ম চালু হবে। সংস্কৃতির জগতে যদি এভাবে মূল ধারায় অপরিচিত নানা জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে, তাহলে সামগ্রিকভাবে যে বর্ণবৈষম্য বিরোধী আন্দোলন অনেকটাই শক্তিশালী হবে, সেকথা বলাই বাহুল্য।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
এবার অস্কারের মঞ্চে জামিয়া মিলিয়ার তিন অধ্যাপক-পরিচালক