শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই ‘সব্যসাচী’, লকডাউনে স্বপ্নপূরণ যুবকের

বিগত দেড় বছরের করোনা অতিমারী স্তব্ধ করে দিয়েছে বহু মানুষের জীবন। বিশেষ করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের সমস্যাটা আরও গুরুতর হয়ে উঠেছে। অন্যদের মতোই তাঁদেরও উপার্জনের রাস্তা বন্ধ। উপরন্তু সবসময় সংক্রমণের আশঙ্কা তো রয়েছেই। বাকিদের চেয়ে তাঁদের আশঙ্কাটা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি। তবে এই অতিমারীর সময়কেই অন্যভাবে কাজে লাগিয়েছেন ওড়িশার যুবক সব্যসাচী। এই সময়কে কাজে লাগিয়েই নতুন পেশায় প্রবেশ করেছেন তিনি। ইচ্ছা থাকলেও যে পেশায় আগে কোনোদিন সময় দিতে পারেননি। এর মধ্যেই নানা ধরনের হাতের কাজে দক্ষতা অর্জন করেছেন সব্যসাচী। বিশেষ করে, নারকেলের মালা ব্যবহার করে নানারকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করেছেন তিনি। খুব তাড়াতাড়ি সেইসব সামগ্রী অনলাইনে বিক্রি করতে চলেছেন সব্যসাচী।

ওড়িশার বড়গড় জেলার পুঁইতলা গ্রামের বাসিন্দা ২৯ বছরের সব্যসাচী প্যাটেল। জন্মের কিছুদিন পরেই কঠিন হাড়ের রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। আর তারপর থেকেই তাঁর দুটি পা বেঁকে যায়। কোনোদিন ঠিক করে হাঁটতে পারেননি আর। তবে এই প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করেও জীবনের লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। পড়াশোনাতেও ফাঁকি দেননি কখনো। হোটেল ম্যানেজমেন্টের উপর একটি কোর্সও করেছিলেন। কিন্তু শারীরিক সমস্যার জন্যই কোনো হোটেলে কাজ পাননি।


হাতের কাজের প্রতি আগ্রহ ছিল ছোটো থেকেই। হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার সময় খাবার সাজানোর ভিতর দিয়ে সেই আগ্রহ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু সেটা নিয়ে নতুন কিছু করার কথা ভাবা হয়নি কখনোই। অতিমারীর ঠিক আগে আগেই তাঁর এক আত্মীয়ের ফোনে নারকেলের মালা দিয়ে কফি-মাগ তৈরির ভিডিও দেখেছিলেন তিনি। আর তার পরেই স্থানীয় মন্দির থেকে বেশ কিছু নারকেল মালা সংগ্রহ করে আনেন। সেগুলো খোদাই করে কফি-মাগের পাশাপাশি ওয়াইন-গ্লাস এবং ঘর সাজানোর নানা উপকরণও তৈরি করতে শুরু করেছিলেন সব্যসাচী। তবে তাকে ব্যবসায় রূপ দেওয়ার কথা তখনই ভাবেননি।

আরও পড়ুন
পোলিও-র প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে প্যারালিম্পিকে বসিরহাটের সাকিনা

একদিন সব্যসাচীর এক আত্মীয় তাঁর কাছ থেকে দুটি কফি-মাগ নিয়ে গেলেন। পেশায় স্কুল-শিক্ষক সেই আত্মীয় তাঁর সহকর্মীদেরও দেখালেন। তাঁরাও কয়েকজন অর্ডার দিলেন। এভাবেই ক্রমশ ব্যবসার পরিসর তৈরি হচ্ছিল। সম্প্রতি তাঁর তৈরি এইসব জিনিস বিক্রির বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে অনলাইন বিপণন সংস্থা আমাজন। খুব তাড়াতাড়ি আমাজনের মাধ্যমে এইসব জিনিস বিক্রি করতে শুরু করবেন সব্যসাচী। আগামীদিনে এই ব্যবসা বন্ধ করারও কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সব্যসাচী যে নিজের পছন্দের পেশা বেছে নিতে পেরেছেন, এতে খুশি তাঁর বাবা-মাও।

আরও পড়ুন
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই অসংখ্য মানুষকে দিনবদলের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আরমান

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তৈরি ক্যাফে, ধুঁকছে লকডাউনের পরেও