অবশেষে চলে এল ২০২০-র বড়োদিন। এই বছরটা প্রায় সবার কাছেই বেশ খারাপ। একের পর এক প্রিয় মানুষদের মৃত্যু, সেইসঙ্গে করোনা অতিমারির ছোবল সবাইকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। এমন অসহায়তা নিয়েই বড়োদিনে প্রার্থনায় মেতে উঠবেন প্রত্যেকে। ক্রিসমাস ইভে আমাদের প্রার্থনা, আগামী দিনগুলো যেন ভালো কাটে।
শেষ বাক্যটি আরও একবার পড়ুন। কোথায়, আশ্চর্যজনক কিছুই তো নেই! তা নেই বটে; তবে পাঠক, আপনার মনোযোগ নিয়ে যাব একটি ছোট্ট শব্দের দিকে— ‘ক্রিসমাস’। কারোর কাছে বড়োদিন, যিশুর আবির্ভাব লগ্ন; কারোর কাছে ‘ক্রিসমাস’; আবার কারোর কাছে ‘এক্সমাস’। হ্যাঁ, এই নামেও গোটা বিশ্বে পরিচিত এই মরসুম। আপাত দৃষ্টিতে খুব সাধারণ, স্বাভাবিক ব্যাপার মনে হলেও, এই নামের পিছনে রয়েছে একটি বিশেষ ইতিহাস।
এখনকার দিনে দাঁড়িয়ে ‘ক্রিসমাস’ বা ‘এক্সমাস’ দুটোই সমার্থক হয়ে গেছে। দুটোই এখন বহুল ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই এক্সমাস শব্দটি এল কেমন করে? এর পেছনে লুকিয়ে আছে একটি বিশেষ ভাষা। একটু গোড়া থেকেই শুরু করা যাক। সময়টা দ্বিতীয় শতক। পৃথিবীর সভ্যতার গতিপথ তখনও একটু একটু করে বদলাচ্ছে। ইংরেজি ভাষা গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েনি। তখনও গ্রিক ও রোমান ভাষার রমরমা। এবং সর্বোপরি, খ্রিস্ট ধর্মও তার প্রাথমিক দশায়। এরই মধ্যে খ্রিস্টানরা নিজেদের প্রয়োজনেই বেশ কিছু সংকেত চিহ্ন ব্যবহার করতে শুরু করল। ইতিহাসে যা পরিচিত ‘খ্রিস্টোগ্রাম’ নামে। এটি ছিল একদম নতুন; কিন্তু গ্রিক প্রভাব ছিল স্পষ্ট…
এরকমই একটি সংকেত ছিল ইচথাইস। লেখার ভাষায় যা দাঁড়ায় অনেকটা এইরকম— ἸΧΘΥΣ। এর অর্থ ছিল ‘যিশু’। তখনও জেসাস শব্দটির অবতারণা হয়নি। শুধু তাই নয়, গ্রিক ভাষায় এই ইচথাইস সংকেতটির অর্থ হল ‘মাছ’। কাজেই, এখান থেকেই গ্রিক প্রভাবের ব্যাপারটি ঐতিহাসিকদের নজরে আসে। এরপর চতুর্থ শতকে বাইজানটাইনের সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইন সম্পূর্ণ অন্যরকম একটি সংকেত সামনে নিয়ে আসেন। খ্রিস্ট বা ক্রাইস্ট লিখতে গেলে তখন এইভাবে লিখতে হত— ΧΡΙΣΤΟΣ। এই পুরো শব্দ থেকে প্রথম দুটি অক্ষর নিয়ে নতুন একটি সংকেত আনেন, যার নাম চি-রো (XP)।
এখানে খেয়াল করুন পাঠক। ইতিহাস বলে, কনস্টানটাইনের আমল থেকেই খ্রিস্ট বা ক্রাইস্টকে ‘চি’ হিসেবে বলা বা লেখা শুরু হল। আর চি মানে ‘X’, আর ‘P’ মানে রো। কাজেই পুরো শব্দকে বদলে দিয়ে সামনে চলে এল কেবল একটি অর্থ। সবই ভাষার খেলা। তখন থেকে অনেকটা সময় পর্যন্ত ‘Christ’ শব্দকে সরিয়ে ব্যবহার করা হত ‘X’। মানে, ‘Christian’, ‘Christina’ ইত্যাদি শব্দগুলির বদলে লেখা হত ‘Xian’, ‘Xina’— এরকম। দেখে অনেকটা সংকেতের মতো লাগলেও একটা বড়ো সময় ধরে এমনটাই প্রচলিত ছিল।
ঠিক এইভাবেই ‘Christmas’ হয়ে গেল ‘Xmas’। ১৫৫০-এর দশক অবধিও ক্রিসমাসকে বলা হত ‘X’temmas’। পরবর্তীকালে সেখান থেকে হল এক্সমাস। ধীরে ধীরে সময় এগিয়ে গেল। ইতিহাসের চাকাও ঘুরতে লাগল নিজের মতো করে। বদলাতে লাগল ভাষাও। তার রূপ বদলাল, ধরণ বদলাল। খ্রিস্টোলজি থাকলেও, ওইভাবে শব্দগুলি এখন আর ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু ‘Xmas’ এখনও টিকে আছে ক্রিসমাসের পাশে। আর আজ? দুটো শব্দই হাত ধরাধরি করে চলেছে। ভাষার মহিমা ভাবুন!
আরও পড়ুন
দক্ষিণেশ্বরে যিশুপুজো করেছিলেন রামকৃষ্ণ, সেই রীতি মেনেই আজও বড়োদিন পালিত হয় মিশনে
Powered by Froala Editor