মানুষের মৃতদেহ পরিণত হবে গাছে, ইতালিতে তৈরি আশ্চর্য কফিন

থ্যালিয়া গ্রেস। রিক রিওরডনের, পারসি জ্যাকসন বইয়ের একটি চরিত্র। থ্যালিয়া হল ডেমি গড। অর্থাৎ, অর্ধেক মানুষ এবং অর্ধেক ভগবান। অনেকটা হারকিউলিসের মতোই। দৈত্যরা তাঁদের রাজ্যে আক্রমণ করলে প্রাণ যায় থ্যালিয়ার। জিউস-কন্যা থ্যালিয়া মৃত্যুর পর গাছ হয়ে গিয়েছিল। আর এই গাছকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয় অদৃশ্য এক প্রাচীর। যা রক্ষাকবজ হয়ে দাঁড়ায় ডেমিগডদের রাজ্য, ক্যাম্প অফ হাফব্লাডের।

শুধুই কি গল্পে? বাস্তবেও কি সম্ভব এমনটা? এবার এই অবাস্তবকে সম্ভব করে দেখাল ক্যাপশুলা মান্ডি নামের একটি কোম্পানি। চিরাচরিত কফিনের বদল করে তৈরি করল নতুন ধরণের সমাধি।

ইতালির কোম্পানি ক্যাপশুলা মান্ডির প্রধান অ্যানা গিতেল্লি এবং রাউল ব্রেটজেল বছর খানেক আগেই সমাধিস্থ করার নতুন পদ্ধতির কথা ভেবেছিলেন। কফিনের জন্য বানিয়ে ছিলেন নতুন নকশা। সেই নকশাকেই সামনে রেখে কাজ আরো খানিকটা এগিয়ে নিয়ে গেলেন তাঁরা। মাথায় রাখলেন, সমাধিস্থ হওয়ার পর মানবদেহের প্রকৃতিক পদার্থে রূপান্তরিত হওয়ার কথা।

তাঁদের তৈরি এই নতুন কফিন একই সঙ্গে জৈব এবং জীবাণুবিয়োজ্য। সমাধিস্থ করার পর জৈব বিক্রিয়ায় মানবদেহ বিয়োজিত হওয়ার পর তৈরি হবে গাছের জন্য পরিপোষক নানা জৈব পদার্থ।

এই নতুন কফিনের আকার অনেকটা ডিমের মতো। জন্মের আগে মানুষের ভ্রূণের অবস্থান যেমন হয়। অনেকটা তেমনভাবেই এই নতুন কফিনের মধ্যে রাখতে হবে মৃতের দেহ। তারপর কবরস্থ করা হলে, এর ঠিক ওপরে লাগাতে হবে ছোটো চারা গাছ। অথবা পুঁতে দিতে হবে কোনো গাছের বীজ। ক্রমে দেহ বিয়োজিত হলে ওই পরিপোষকই সাহায্য করবে গাছকে বেড়ে উঠতে। মানুষের দেহ পরিণত হবে গাছে।

তবে মৃতদেহের পেশি সংকোচনের আগেই ভরে ফেলতে হবে কফিনে। পেশি সংকোচনের পরে, দেহ অনেকটা নমনীয় হয়ে এলে এই কফিন মাটির নিচে সমাধিস্থ করতে হবে। অনেকটা গাছের বীজের মতোই।

এই কফিনগুলি তৈরি করা হচ্ছে স্টার্চ প্লাস্টিকে। দেহের মতোই এই প্লাস্টিকও জৈববিয়োজ্য। শরীরের বিয়োজন হলে সহজেই মাটিতে মিশতে পারবে খনিজ, ভিটামিন এবং অন্যান্য পরিপোষক। এই অভাবনীয় চিন্তাধারা কবরস্থানকে সবুজ করে তুলতে পারে অচিরেই। পাথুরে স্মৃতিফলকের থেকে যা দৃষ্টিনন্দন এবং পরিবেশবান্ধব। তাছাড়া সমাধির উপরে বেড়ে ওঠা গাছের দৌলতে মানুষ যন্তও রাখতে পারবে প্রিয়জনদের। ইতিমধ্যেই আমেরিকা ও ব্রিটেনের বেশ কিছু এমন সবুজ দৃশ্য নজর কেড়েছে।

তবে এখানেই থেমে থাকেনি তাঁদের কাজ। এখনও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, কীভাবে চিতাভস্ম মাটিতে রোপণ করলে গাছ হয়ে উঠতে পারে, তার ওপরে। পরিবেশবান্ধব এই উদ্যোগ সত্যিই অনস্বীকার্য।