দীর্ঘ গবেষণার পর আবারও প্রযুক্তির জগতে এক বিরাট সাফল্যের সাক্ষী থাকল ভারত। মহারাষ্ট্রের পুনে শহরে দুই গবেষণা সংস্থার উদ্যোগে দেখা গেল আলোর দিশা। এবার হয়তো সময়কে নিখুঁতভাবে গুনতে পারবে ভারত। আর সেই কাজটা করবে প্রযুক্তির জগতে নবতম আবিষ্কার, অপটিক্যাল অ্যাটমিক ক্লক। গবেষকদের দাবি, এই ঘড়ি প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছরে একটি সেকেন্ড স্কিপ করবে। অর্থাৎ আমাদের মহাবিশ্বের আনুমানিক বয়স যত, ততদিনে। বাস্তবে বলা যায়, সময়ের গণনায় প্রায় কোনো ভুল থাকবে না এই ঘড়িতে।
পুনের ইন্টার-ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (ইউকা) এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার)-এর বিজ্ঞানীরা একসঙ্গে মিলে আবিষ্কার করেছেন এই ঘড়ি। বছর ছয়েক আগে ভারত অ্যাটমিক ক্লক তৈরিতে সফল হয়েছিল। সিজিয়াম পরমাণুর সাহায্যে সময়ের হিসাব নিত এই ঘড়ি। প্রায় ৯২০ কোটি হার্ৎজের মাইক্রোওয়েভ বিকিরণে সময়ের যে হিসাব পাওয়া যেত, তার মধ্যে ভুল ছিল সামান্যই। কিন্তু অপটিক্যাল ক্লক আরও অনেক বেশি নিখুঁত।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অবশ্য সাধারণ ঘড়িতেই হিসাব রাখা যায়। কখনও সময় ভুল এলে মিলিয়ে নিয়ে ঠিক করে নেওয়া যায়। কিন্তু এই মিলিয়ে নেওয়ার জন্যও তো কোনো আদর্শ ঘড়ি থাকা প্রয়োজন। আমরা এর জন্য সাধারণত জিপিএস ব্যবস্থার উপরেই ভরসা রাখি। কিন্তু জিপিএসের হিসাবের মধ্যেও বেশ খানিকটা ভুল থেকে যায়। প্রথমত, মহাকাশের স্যাটেলাইট থেকে আলোকরশ্মি পৃথিবীতে এসে পৌঁছতে এবং পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইটে ফিরে যেতে কিছুটা সময় লেগে যায়। দ্বিতীয়ত ঘূর্ণায়মান স্যাটেলাইটের সঙ্গে পৃথিবীর আপেক্ষিক গতির তারতম্য তো থাকেই।
সিজিয়াম অ্যাটোমিক ক্লকে অবশ্য এই সমস্যা ছিল না। কিন্তু সেখানে বিকিরণের কারণে উষ্ণতা মাঝেমধ্যেই বেড়ে যায়। আর তার ফলেই টাইম ল্যাপস হয়। তাই বিজ্ঞানীরা খুঁজছিলেন এমন একটি পরমাণু, যার উষ্ণতা প্রায় শূন্য কেলভিনে রাখা যায়। অর্থাৎ যে উষ্ণতায় কোনো গতিশক্তি থাকে না পরমাণুর মধ্যে। আর তাই অ্যাটাবিয়াম এবং স্ট্রনটিয়াম পরমাণুকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে অবশ্য জাপান এই ঘড়ি তৈরিতে সাফল্য দেখিয়েছে। চিনেও গবেষণা চলছে জোর কদমে। আমেরিকার টরোন্টো ইউনিভার্সিটিতে ক্যালসিয়াম পরমাণুকে ব্যবহার করার কাজও চলছে। তবে এর মধ্যেই ভারতের সাফল্য এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা বৈকি। আগামী দিনে যে পরমাণু প্রযুক্তির জগতে দিশা দেখাতে পারে ভারত, সেকথাই প্রমাণিত হল আবার।
আরও পড়ুন
উন্নত ইন্টারনেট প্রযুক্তি পেল আন্দামান; কতটা বদলাবে পরিস্থিতি?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ছায়াকে কাজে লাগিয়েই তৈরি হবে বিদ্যুৎ, অভিনব প্রযুক্তি সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীদের