রাস্তার ধারে চায়ের দোকান। সকালে আগুন জ্বলতেই মানুষের ভিড় শুরু হয়। হাজারো তর্ক-বিতর্ক। আর এখন তো ভোটের মরসুম। তবে এর মধ্যে বসেই পাশের র্যাক থেকে নামিয়ে নিতে পারেন কোনো পছন্দের বই। চা খেতে খেতে সময় কাটানোর এমন সঙ্গী আর কে আছে? না, শহর কলকাতার বুকে কোনো ক্যাফেটেরিয়ার কথা বলছি না। এমন চায়ের দোকান পেয়ে যাবেন বর্ধমান শহরের প্রান্তে বাবুরবাগ মোড়েই। সম্প্রতি পথচলা শুরু হল এই মুক্ত পাঠাগারের।
“বই তো সমাজের প্রতিটা মানুষের সঙ্গী। আর চায়ের দোকানও নানা স্তরের মানুষের মেলামেশার জায়গা। তাই আদর্শ পাঠাগারের জায়গা আর কোথায় হতে পারে?” বলছিলেন বর্ধমান ফুডিজ সংস্থার কর্ণধার মৈনাক মুখার্জি। মাস দুয়েক আগে তাঁর কাছে এসেছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়া। তাঁদের কাছেই প্রথম এমন পরিকল্পনার কথা শুনেছিলেন মৈনাক মুখার্জি।
“করোনা পরিস্থিতিতে আমরা সবাই ভীষণ একা হয়ে পড়েছিলাম। লকডাউন উঠে গেলেও মানুষের স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরে আসেনি। এই একাকিত্বের সময়েই যাতে বই মানুষের সঙ্গী হতে পারে, তাই এরকম পরিকল্পনার কথা ভেবেছিলাম আমরা।” বলছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশন স্নাতকোত্তর পড়ুয়া নূরনবী শেখ। আর সেই পরিকল্পনাকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাওয়া। নূরনবী বলছিলেন, “এই সময়ে পৃথিবীর সব প্রান্তেই ওপেন লাইব্রেরির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আর তার কারণ মানুষের একাকিত্বই।”
তবে এই বিষাদের মাঝেও মানুষের নিজের মতো সময় কাটানোর ঠিকানা হয়ে উঠল ময়নাদার চায়ের দোকান। আর এই ছোট্ট পাঠাগারের বইয়ের র্যা কের ছবি এঁকে দিয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী তৌসিফ হক। এখানে সাহিত্যের বই যেমন থাকবে, তেমনই পাওয়া যাবে মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার বইও। পাশাপাশি সমাজ ও অর্থনীতি বিষয়ক বিশ্লেষণাত্মক বই রাখারও পরিকল্পনার কথা জানালেন নূরনবী। আপাতত উদ্যোগ খুবই সামান্য। তবে সমস্ত মানুষ এগিয়ে এলে এই ছোটো উদ্যোগই বড়ো হয়ে উঠতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে সেই আহ্বানই জানাচ্ছেন নূরনবী এবং মৈনাক মুখার্জি। যে যার মতো বই জমা দিতে পারেন লাইব্রেরির র্যা কে। “আর এই উদ্যোগ সফল হলে আগামীদিনে গোটা বর্ধমান জুড়ে এমন ওপেন লাইব্রেরি তৈরি করা হবে” বলছিলেন মৈনাক মুখার্জি। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণই এই উদ্যোগকে সফল করে তুলতে পারে।
আরও পড়ুন
মাতৃভাষা দিবসে বইপাড়ার নতুন ঠেক, অভিনব ভাবনা নিয়ে হাজির ‘বর্ণ-বইমহল’
Powered by Froala Editor