পুরুষ-প্রবেশ নিষেধ, একমাত্র মহিলারাই ঢুকতে পারেন এই জঙ্গলে!

সমুদ্রের বুকে ছড়িয়ে আছে ছোটো ছোটো দ্বীপ। আর দ্বীপের উপরে ঘন হয়ে আছে ম্যানগ্রোভ গাছের জঙ্গল। একটি নৌকা ভেসে চলেছে সমুদ্রের সংকীর্ণ অংশ দিয়ে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হল, যাত্রীদলটিতে একজনও পুরুষ নেই। হ্যাঁ, এই জঙ্গলের মধ্যে শুধুই মহিলাদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মহিলারা এখানে আসেন, ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে যান। আর সেইসঙ্গে চলে গল্পগুজবও। পুরুষরা সচরাচর কেউ আসেন না। আর যদি কেউ নিয়ম ভেঙে ঢুকে পড়েন, তাহলে তাঁকে দিতে হবে বিপুল পরিমাণ জরিমানা।

সংরক্ষণ, বিশেষত মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ আধুনিক যুগে অন্যতম আলোচিত বিষয়। তবে ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া বদ্বীপ অঞ্চলের এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যটি কয়েক হাজার বছর ধরে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। আর একটি নিয়ম আছে এই অরণ্যে প্রবেশ করার। এখানে আসতে হবে সমস্ত পোশাক খুলে রেখে। তারপর শরীরটা এলিয়ে দিতে হবে সমুদ্রের বুকে। গল্পগুজব চলতে চলতেই চলবে ঝিনুক সংগ্রহ। তারপর নৌকায় করে সেইসব ঝিনুক নিয়ে যাওয়া হবে বাজারে। সমুদ্রে ভ্রমণের জন্য আসা পর্যটকদের কাছে বিক্রি করা হয় সেইসব ঝিনুক।

এই ঝিনুক বিক্রি করে যেমন মহিলারা নিজেদের অর্থনৈতিক দায়িত্ব নিতে পারেন, তেমনই একটা গোটা দিন এখানে কাটানোও কম বিষয় নয়। উপজাতি মহিলাদের অনেকেই মনে করেন, এখানে ঢুকলেই তাঁরা স্বাধীনতার স্বাদ পান। এই স্বাধীনতাটুকুই তাঁদের কাছে ভীষণ জরুরি। তবে ক্রমশ আধুনিকতার গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার এই জঙ্গল। ৫০ বছর আগে অরণ্যে যা গাছ ছিল, আজ তার অর্ধেকও বেঁচে নেই। বে-আইনি পাচারকারীরা নিয়মিত গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেই। সেইসঙ্গে রয়েছে পরিবেশ দূষণও। শহরাঞ্চল থেকে প্লাস্টিক ও অন্যান্য আবর্জনা এসে আটকে যাচ্ছে সমুদ্রের তীরে। আর এই দূষিত পরিবেশে কমছে ঝিনুকের সংখ্যাও।

পৃথিবীজুড়ে নানা উপজাতির মধ্যে এমন অনেক আশ্চর্য রীতি দেখা যায়। আর এইসব রীতিনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে প্রকৃতিও। সভ্য মানুষের বিলাসিতার যোগান দিতে গিয়ে আজ বিপন্ন সেই প্রকৃতি। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের এইসব সংস্কৃতিও।

আরও পড়ুন
কল্পনার পর সিরিশা, ১৮ বছর পর আবার মহাকাশযাত্রায় ভারতীয় মহিলা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
গার্হস্থ্য হিংসা রুখতে পাঠ্যপুস্তকে বদল, মহিলাদের জন্য বিশেষ আদালতও গড়ছে কেরালা