পরিবেশের হাল ফেরাতে দরকার আদিবাসী ক্ষমতায়ন, উপদেশ জাতিসংঘের

ক্রমশ উষ্ণতা বেড়ে চলেছে পৃথিবীর। বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। আর তার অন্যতম কারণ হল বনভূমি-নিধন। এবার এই সমস্যা সমাধানের সহজ পথের সন্ধান দিল জাতিসংঘ। সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে পরিবেশের হাল ফেরাতে গেলে, ক্ষমতায়ন করতে হবে প্রাচীন জনগোষ্ঠীগুলির। একমাত্র তাঁদের তত্ত্বাবধানেই সম্ভব জীববৈচিত্রের অবলুপ্তি, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং কার্বন নির্গমনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বহু যুগ ধরে এই জনগোষ্ঠীদের আবাসস্থল অরণ্য। অরণ্যের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে তাঁদের ঐতিহ্যবাহী প্রথা, সামাজিক জীবন। বনভূমি সংরক্ষণের জ্ঞানও তাঁদের সহজাত। পাশাপাশি বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতিগুলির গুরুত্বের ব্যাপারেও সবথেকে বেশি ওয়াকিবহাল তাঁরাই। সাধারণত সংরক্ষণের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দিতে ব্যয় হয় বিপুল অর্থ এবং সময়। দরকার পড়ে গবেষণারও। প্রাচীন জনগোষ্ঠীগুলিকে এই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হলে, অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে প্রশাসনের কাজ।

তবে গোটা প্রক্রিয়াটি তাঁদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তা কেবলমাত্র এই জনগোষ্ঠীগুলির সুরক্ষার কারণেই। জাতিসংঘের রিপোর্টে দাবি করা হয়, শুধু ২০২০ সালেই অরণ্যনিধনের প্রতিবাদ করায় খুন হয়েছেন ৩৩১ জন আদিবাসী মানুষ। কাজেই প্রকৃতিরক্ষার পরিবেশগত দিকগুলোর ভার তাঁদের দিয়ে, প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকেই। সরকারি উপদেষ্টামণ্ডলীতেও সদস্য হিসাবে নিযুক্ত করতে হবে সম্প্রদায়গুলির গোষ্ঠীপ্রধানদের। একমাত্র সেভাবেই আসতে পারে সাফল্য।

ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের সমীক্ষাও সমর্থন জানাচ্ছে জাতিসংঘের এই আবেদনকে। সেই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে কার্বন নির্গমনের হার স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ থেকে ৪২ গুণ কম হয়। পাশাপাশি তাঁদের বাসযোগ্য অরণ্যে শোষিত হয় পৃথিবীর মোট কার্বন নির্গমনের ৩০ শতাংশ।

আরও পড়ুন
শিল্পকে হাতিয়ার করেই সভ্যতার সঙ্গে লড়াই ব্রাজিলের বিলুপ্তপ্রায় জনগোষ্ঠীর

তবে অবৈধ খনন, বৃক্ষচ্ছেদন, পাম গাছের একচেটিয়া চাষ, গবাধি পশুর বিচরণ, ঝুমচাষ— একাধিক কারণে দ্রুত আয়তন কমছে বনভূমির। একমাত্র এই জনগোষ্ঠীগুলির হাতেই অরণ্যের অধিকার তুলে দিলে, হারানো চেহারা ফিরে পাবে আমাজন-সহ পৃথিবীর অন্যান্য ক্রান্তীয় বনভূমি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পদক্ষেপ নেওয়ার উপযুক্ত সময় এটাই। মহামারীর আবহে প্রায় সব দেশের অর্থনীতিই বড়ো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আর সেই ঘাটতি পূরণ করতে অরণ্যের ওপরেই কোপ পড়তে চলেছে আগামী দিনে। বেআইনি বননিধন ছাড়াও সরকারি মদতেও ধ্বংসযজ্ঞ চলতে পারে ক্রান্তীয় অরণ্যগুলিতে। সে-ব্যাপারে সতর্ক করছে জাতিসংঘ-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা। 

আরও পড়ুন
সুন্দরবন সংরক্ষণের পথে কলকাতা হাইকোর্ট, উচ্ছ্বসিত পরিবেশকর্মীরা

উল্লেখ্য, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই অরণ্যের সম্পূর্ণ অভিভাবকত্বের দাবি জানিয়ে আসছে লাতিন আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান জনগোষ্ঠীগুলির সংগঠন সিওআইসিএ। এবার সেই দাবিকেই আরও জোরালো করল জাতিসংঘ। অন্যদিকে পরিবেশরক্ষা এবং আবহাওয়া পরিবর্তন সংক্রান্ত আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলিতে জায়গা করে দেওয়া হবে সিওআইসিএ-কে। এমনটাই জানিয়েছে তারা। সব মিলিয়ে এই বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত কতটা ভাগ্য ফেরাতে পারে ‘সবুজ পৃথিবী’-র, সেটা দেখার… 

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
পরিবেশ রক্ষার আর্জি নিয়ে নির্বাচন যুদ্ধে বাঁকুড়ার অধ্যাপক

Latest News See More