সংক্রমণ এড়াতে আন্তর্জালেই পুজো-পরিক্রমা প্রবীণদের

“আশা করেছিলাম এই বছরে আবার আগের ছন্দে ফিরে আসবে সবকিছু। বয়স্ক মানুষদের হাত ধরে আবার প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরতে পারবো আমরা। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও সংক্রমণের আশঙ্কা পুরোপুরি চলে যায়নি। বয়স্ক মানুষদের বিপদের বাড়তি আশঙ্কা তো থেকেই যাচ্ছে।” বলছিলেন ‘রিয়েলটেক নির্মাণ’ সংস্থার কর্ণধার শিশির গুপ্ত। তাই শহর ঘুরে পুজো পরিক্রমার বদলে এবছরেও তাঁরা আয়োজন করেছেন অনলাইন পরিক্রমার। গতকাল মহাপঞ্চমী তিথিতে বাড়িতে বসেই রিয়েলটেক গ্রুপের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্যান্ডেলগুলি ঘুরে দেখলেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। “তবে সবকিছুরই কিছু না কিছু ভালো দিক থাকে। এই যে মাস্কের বাধ্যবাধকতা ছাড়াই তাঁরা প্যান্ডেল ঘুরে দেখতে পারলেন, এই বা কম কীসের?” বলছিলেন শিশিরবাবু।

২০১০ সাল থেকে মূলত শিশির গুপ্তর উদ্যোগেই এই পুজো পরিক্রমার আয়োজন করে আসছে ‘রিয়েলটেক নির্মাণ’ সংস্থা। সেই বছর তাঁর দাদু-ঠাকুমা ঠাকুর দেখতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আর তখনই শিশিরবাবুর মনে হয়, শহরের বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধার অবস্থাই তো এরকম। কেউ থাকেন বৃদ্ধাবাসে। কেউ নিজের বাড়িতে থাকলেও সন্তানদের থেকে দূরে থাকেন। কর্মসূত্রে কারোর সন্তান অন্য কোনো শহরে অথবা একেবারেই দেশের বাইরে। পুজোর সময়েও এসে ওঠা হয় না সবসময়। তাই সেইসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্যই ৮টি ভলভো বাস নিয়ে বেরিয়ে পড়া হল সেই বছর পঞ্চমীর দিন। এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত একইভাবে প্রত্যেক পঞ্চমীতে চলেছে প্যান্ডেল হপিং। তবে ২০২০ সালে একাদশ বর্ষে এসে ছবিটা বদলে যায়। করোনা অতিমারীর কারণে বাইরে বেরনো বন্ধ। অনলাইন পরিক্রমার আয়োজন। গতবছরের মতোই এই বছরেও অনলাইন পরিক্রমার সঞ্চালনা করেছেন অভিনেতা তথা বাচিকশিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।

তবে আগেরবারের চেয়ে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হওয়ায় হৃষিকেশ মাঠে একটি আড্ডার আয়োজন করা হয়েছিল পঞ্চমীর সকালে। সেখানে বয়স্ক মানুষদের হাতে রিয়েলটেক গ্রুপের পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হল গিফট ভাউচার। গতবছর বৃদ্ধাবাসে এবং তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে গিফট ভাউচার দিয়ে এসেছিলেন স্বেচ্ছাসেবীরা। কিন্তু বাড়ি থেকে একটু বেরিয়ে সবাই মিলে মুখোমুখি হওয়াটুকুও যে প্রয়োজন। প্যান্ডেলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। তাই আড্ডায় হাজির করা হয়েছিল প্রায় ১৫০ জন বয়স্ক মানুষকে। আর বাকিরা পুজোর স্বাদ পেয়েছেন ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে। শিশিরবাবু এখনও আশা করেন, পরের বছর আবার হইহই করে সবাইকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরোতে পারবেন। একদিন তাঁরাই তো হাত ধরে শহর ঘুরিয়ে দেখাতেন আজকের তরুণ প্রজন্মকে। তাই সেই দায়িত্বটুকু তো অপরদিক থেকেও থেকেই যায়।

Powered by Froala Editor

More From Author See More