২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি। ভারতে প্রথমবারের জন্য কেরালার থ্রিসুরে ধরা পড়েছিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি। তারপর পেরিয়ে গেছে এক বছর। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১ কোটি সাড়ে ৭ লক্ষ। মৃত্যু হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের। অথচ লকডাউন আর বিধিনিষেদের বেড়াজালে প্রিয়জনকে শেষ বিদায়টুকুও জানাতে পারেননি অনেকে। সুযোগ হয়নি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনেরও। কোভিডে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া সেই প্রিয়জনদের জন্যই এবার তৈরি হল অনলাইন স্মৃতিসৌধ।
ন্যাশনাল কোভিড মেমোরিয়াল (www.nationalcovidmemorial.in)— গত শনিবার উদ্বোধন হল ই-স্মৃতিসৌধটির। কোভিডে মৃত স্বজনদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ছবি সহ স্মৃতিকথা লিখে ব্লগ আকারে প্রকাশ করা যাবে এই স্মৃতিসৌধে। দরজা খোলা সকলের জন্যই। প্রতিবছর মৃত্যুদিনে ভার্চুয়ালি মালাতে সেজে উঠবে তাঁদের ছবি। জ্বলবে বাতিও।
জাতীয় স্তরের এই উদ্যোগটি মস্তিষ্কপ্রসূত এক বাঙালি চিকিৎসকের। সিসিএন-এর পরামর্শদাতা ও হেমাটোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীই প্রাথমিকভাবে উদ্যোগ নিয়েছিলেন এই স্মৃতিসৌধ স্থাপনের। কারণ, স্বজনহারার তালিকায় রয়েছে তাঁর নামও। গত বছর আগস্ট মাসের ১০ তারিখেই তিনি হারিয়েছিলেন তাঁর সহকর্মী ও বন্ধুস্থানীয় চিকিৎসক প্রদীপ ভট্টাচার্যকে। করোনার সময়ে যখন অধিকাংশ ডাক্তারি চেম্বারই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সাধারণের জন্য, তখন নির্ভীকভাবেই চিকিৎসার কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। নিয়মিতভাবেই বসতেন শ্যামবাজারের চেম্বারে। স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন চিকিৎসা পরিষেবা। পরিচিত ছিলেন ‘সাধারণের ডাক্তার’ হিসাবে। আর এই লড়াইয়ে শেষ অবধি প্রাণও দিতে হয় শ্যামনগরের এই চিকিৎসককে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এদিন উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী ব্রততী ভট্টাচার্য। শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের সঙ্গেই তিনি জানান, সেই সময় নানাভাবে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় মানুষ। চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যও তুলে দিয়েছিলেন বাসিন্দারা। তবে শেষরক্ষে হয়নি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরেক ব্যক্তি শান্তনু মুখোপাধ্যায় জানান, মহামারীর কারণে মায়ের শেষকৃত্যেও হাজির হতে পারেননি তিনি। যুক্তরাজ্য থেকে ফেরার সময় বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল সমস্ত উড়ান। তাঁর মা বাঁকুড়ার এক জনৈক শিক্ষিকা। সেই সুবাদেই স্থানীয়রাই তাঁর অনুপস্থিতিতে সম্পন্ন করেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া।
তবে দু’একটা উদাহরণেই শেষ নয় এই তালিকার। লক্ষ লক্ষ মানুষ চোখের জলেই বিদায় দিয়েছেন প্রিয়জনদের। তাঁদের সমবেদনা জানাতে, হারানো স্বজনদের ন্যূনতম শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ করে দেওয়ার এই উদ্যোগ সত্যিই অভিনব…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের থেকেও বেশি কোভিডে মৃতের সংখ্যা! ভয়াল পরিস্থিতি আমেরিকায়