১ বছর ১ দিন : উহান থেকে শুরু, শেষ অজানা কোভিডের

দিনটা ছিল ১৭ নভেম্বর। চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ধরা পড়েছিল এক অজানা জ্বর। সর্দি, কাশির সঙ্গে উপসর্গ হিসাবে দেখা গিয়েছিল শ্বাসকষ্টও। চিকিৎসক, গবেষকরা চিহ্নিত করেছিলেন এই রোগের জন্য দায়ী এক নতুন ভাইরাস— করোনা ভাইরাস। কিন্তু তখন কেই বা জানত সারা পৃথিবীর বুকে থাবা বসাতে চলেছে এই অজানা রোগ, চেহারা নিতে চলেছে মহামারী?

গতকালই এক বছর পেরিয়ে গেল সেই অভিশপ্ত দিনের। আক্ষরিক অর্থে করোনার বর্ষপূর্তি। ২০১৯-এর ১৭ নভেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ১। আজ সারা বিশ্বে সেই সংখ্যাই গিয়ে ঠেকেছে সাড়ে ৫ কোটিতে।  মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ১৩ লক্ষের গণ্ডি। তারপরেও কীভাবে নিস্তার সম্ভব এই মৃত্যুমিছিল থেকে, তা বাতলাতে পারেনি একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান।

গত বছর ডিসেম্বরের শেষে যখন মাত্র ৬০ জনের মধ্যে ধরা পড়েছিল, তখন সারা চিনে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৬০। তবে সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে স্বভাবের জন্যই জানিয়েছিল এই ভাইরাসের সংক্রমণ অতিমারীর রূপ নিতে পারে। আর হলও তেমনটাই। প্রথমে উহান থেকে চিনের বিভিন্ন প্রদেশে, তারপর বহির্বিশ্বেও। আটকানো গেল না তার পরিধিকে।

মার্চের শেষের দিকে চিনে আক্রান্তের সংখ্যা যখন ৬০ হাজার অতিক্রান্ত, তখন অন্যান্য দেশগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে ধরা পড়ছে সংক্রমণ। ১টা কিংবা ২টো সংক্রমণে বিন্দুমাত্র বিচলিত ছিল না সেখানকার প্রশাসন। আর সেই আপাত নিশ্চিন্ততাই ডেকে আনল বিপদকে। প্রশাসনের এই গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল খোদ চিনের বিরুদ্ধেও। তা সত্ত্বেও কঠোর লকডাউনের মাধ্যমেই সংক্রমণকে ৮০ হাজারের মধ্যেই বেঁধে ফেলেছিল জিংপিংয়ের সরকার। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ভাইরাসমুক্ত হয়েছিল তারাই। যদিও দ্বিতীয় তরঙ্গে চিনে পুনরায় ছড়িয়েছে মারণ ভাইরাস। তাও তার পরিমাণ সামান্যই।

ভাইরাসের দৌরাত্ম্য কমাতে দেরি হলেও চিনের পথেই পরবর্তীতে হেঁটেছে সারা পৃথিবী। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স সমস্ত দেশেই লাগু হয়েছিল লকডাউন। কিন্তু খুব কি কার্যকরী হয়েছে তা? হাতে গোনা কয়েকটামাত্র দেশেই হার মানানো গেছে ভাইরাসকে। কিন্তু চিনের মতো সফলতা পেল না কেন তারা? তা একরম রহস্যই। সিদ্ধান্ত নিতে কি খুব দেরি হয়ে গিয়েছিল দেশগুলির? নাকি ছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবই ঠেলে দিল এই দুর্যোগের দিকে? জানা নেই উত্তর।

ভারতে বর্তমান সংখ্যাটা নয় নয় করে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ লক্ষে। মৃত্যুর সংখ্যা দেড় লক্ষ ছুঁই ছুঁই। অথচ অর্থনীতিকে সামাল দিতে গিয়ে প্রায় সম্পূর্ণভাবেই তুলে দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও। চালু হয়েছে লোকাল ট্রেন। নিও-নর্মাল সময় বলতে আর গৃহবন্দি নয় বরং এই শব্দবন্ধের মানে কেবলমাত্র মাস্ক আর স্যানিটাইজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কোথাও বা অসচেতনতার কারণেই নেই মাস্কের ব্যবহারটুকুও। এখনও সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েনি সমগ্র ভারতে। তা সত্ত্বেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজারের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে চলেছে। অসতর্কতা কোথায় নিয়ে যাবে একে? নিরুত্তর প্রশাসনও।

আরও পড়ুন
পৃথিবীজুড়ে আক্রান্ত ৫ কোটি, করোনা তবু ছুঁতে পারেনি এই দেশগুলিকে

যুক্তি একটাই, মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশও আক্রান্ত হয়নি এখনও। তবে চিন্তা কীসের? কিন্তু ১ কোটি হতে চলা আক্রান্তের সংখ্যাকে সামান্য বলে পরিগণিত করাও এক ধরণের অসতর্কতাই নয় কি?

ভারত তো বটে বরং সারা বিশ্বই এখন তাকিয়ে রয়েছে ভ্যাকসিনের দিকে। রাশিয়ার ভ্যাকসিন স্পুটনিক বাজারে এলেও ভরসাযোগ্য নয় তা। আর বিকল্প কবে বাজারে আসবে তা অধরাই। তবে তা আবিষ্কৃত হলেই যে সারা পৃথিবীর মুক্তি মিলবে তেমনটা নয়। সাড়ে ৭ শো কোটির জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ যে মুখের কথা নয়। আর ভ্যাকসিনের সুফলও দীর্ঘস্থায়ী হবে না, জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে কোনো অংশে ভাইরাস নির্মূল হলেও থেকেই যাবে পুনরায় সংক্রমণের আশঙ্কা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ইঙ্গিত দিচ্ছে সেই দিকেই। অন্তত কয়েক বছর ধরেই নীলগ্রহে রাজত্ব চালাবে এই অণুজীব। 

সুতরাং এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সচেতনতাই একমাত্র হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে আমাদের। কিন্তু কখন আয়ত্ত করতে পারবে তা ১৩৩ কোটির দেশ? নির্বাক প্রশাসন থেকে চিকিৎসক— সকল করোনাযোদ্ধাই...

আরও পড়ুন
করোনার প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি, আন্তর্জাতিক সম্মান বঙ্গতনয়ার

Powered by Froala Editor