রাতের অন্ধকারেও রক্তবর্ণ হয়ে রয়েছে আকাশ। কয়েক মাইল দূর থেকে দেখা যাচ্ছে আগুনের লেলিহান শিখা, ধোঁয়ার কুণ্ডলী। বিগত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরেই জ্বলছে অ্যারিজোনা। আর এই অগ্নিকাণ্ডই এখন মূল চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশবিদদের কাছে। ১৯৯০ সালের পর গোটা দক্ষিণ-পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে এত বড়ো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বিরল বললেই চলে।
গত ১০ জুন পিনিয়াল কান্টি থেকে মাত্র এক মাইল দূরেই ছড়িয়ে পড়ে বিধ্বংসী দাবানল টেলিগ্রাফ ফায়ার। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই মেসকাল ফায়ার নামে আরেকটি দাবানলের শিকার হয় পার্শ্ববর্তী ফোনিক্স অঞ্চল। শুষ্ক আবহাওয়া এবং বায়ুপ্রবাহের ফলে দ্রুত পরিধি বাড়ছিল দুটি দাবানলেরই। ফলত, পৃথক দুটি দাবানলের সংযুক্ত হতে সময় লাগেনি খুব বেশি। এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে দুটি দাবানলের শিকার হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজার একর জমি। আগুন জ্বলছে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার একর জমিতে।
জরুরি তৎপরতায় এল ক্যাপিটান অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। দাবানলের প্রভাবে ধ্বংস হয়েছে প্রায় দেড়শো পরিবারের ঘর-বাড়ি। তবে বিগত এক সপ্তাহের চেষ্টায় খানিকটা হলেও আয়ত্তে এসেছে আগুন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুলেটিন অনুযায়ী, মেসকাল ফায়ারের পরিধি কমে এসেছে ৮৮ শতাংশে। অন্যদিকে টেলিগ্রাফ ফায়ার নামক দাবানলটির আয়তন ৬৮ শতাংশ থেকে ৫৯ শতাংশে এসে ঠেকেছে।
তবে এক্ষুনিই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না পরিবেশবিদরা। কারণ, শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য তৈরি হতে পারে তাপদাহ। পাশাপাশি, শুষ্ক ঝড় এবং বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া দপ্তর। কিন্তু সামান্য সেই বৃষ্টিপাতে দাবানল আয়ত্তে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং বজ্রপাতের ফলে নতুন করে অগ্নিসংযোগ হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যার ফলাফল হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর।
আরও পড়ুন
এক সপ্তাহ ধরে দাবানলের গ্রাসে মিজোরামের অরণ্য
অন্যদিকে একরের পর একর ঘাসজমি ও কাঁচা কাঠের দহনে বায়ুতে মিশেছে কার্বন মনো অক্সাইডের মতো গ্যাস। এক ধাক্কায় বেড়েছে কার্বন নির্গমনের মাত্রাও। যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে ওই অঞ্চলে, এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন
দেশজুড়ে একাধিক জঙ্গলে দাবানল, প্রতিবছর একই ঘটনার কারণ কী?
গত বছর অক্টোবর মাসেই বিধ্বংসী আগুনের শিকার হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়া। এবার বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দাবানলের ঘটনা ঘটল আমেরিকার আরও এক অঙ্গরাজ্যে। অন্যদিকে চলতি বছরে ভয়ঙ্কর খরার সম্মুখীন ক্যালিফোর্নিয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের ছাপ যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছে গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। কীভাবে আয়ত্তে আসবে এই পরিস্থিতি? সেই উত্তর জানা নেই কারোরই…
আরও পড়ুন
সিমলিপাল অরণ্যে বিধ্বংসী দাবানল, বিপন্ন বহু বন্যপ্রাণ
Powered by Froala Editor