কদিন আগেই পেরিয়ে গেল আরও এক বিশ্ব নারী দিবস। সোশ্যাল মিডিয়া তো বটেই, সারা বিশ্বজুড়েই আয়োজিত হল বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কোথাও কোথাও মহিলাদের জন্য ঘোষিত হল বিশেষ প্রকল্পও। কিন্তু বর্তমান সমাজে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন মহিলারা? এবার সেই তথ্যই জানা গেল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের একটি সমীক্ষায়। নারী-নির্যাতনের উপর করা এখনও পর্যন্ত সবথেকে বড়ো এই সমীক্ষা জানাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে এক-চতুর্থাংশ নারীকেই তাঁদের স্বামী কিংবা পুরুষ সঙ্গীর কাছে যৌন নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়।
দেখা গেছে, ১৫-১৯ বছর বয়সী যুবতীরা অন্ততপক্ষে একবার কোনো না কোনোভাবে শিকার হয়েছেন গার্হস্থ্য নির্যাতনের। তবে এই হার সর্বোচ্চ ৩০-৩৯ বছর বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭৩.৫ থেকে ৮৫.২ কোটি মহিলার যৌন বা শারীরিক সহিংসতার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১৬১টি দেশে ক্রাইম-রিপোর্ট সংগ্রহ করে, তা বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা দুটি। আর তার ভিত্তিতেই এই ফলাফল। যদিও এই রিপোর্টে বিন্দুমাত্র প্রভাব নেই করোনাভাইরাস মহামারীর। জাতিসংঘের অনুমান, মহামারীর বিধিনিষেধ আরোপিত হওয়ার পর এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কমপক্ষে আরও ১.৫ কোটি ঘটনা। তবে এই রিপোর্টে উল্লেখিত হয়েছে শুধুমাত্র যৌন নির্যাতনের কথা। তাতে অন্যধরণের নির্যাতন কিংবা সাইবার ক্রাইমের ঘটনাকে গণ্য করা হয়নি। সেগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করলে, সামগ্রিক ছবিটা আরও ভয়ঙ্কর।
প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে সহিংসতার মাত্রা সবথেকে বেশি। দক্ষিণ এশিয়া এবং উপ-সাহারা অঞ্চলে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মহিলারা সবথেকে বেশি শিকার হয়েছেন যৌন নির্যাতনের। শীর্ষেই রয়েছে কিরিবাতি, ফিজি, পাপুয়া নিউ গিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং বাংলাদেশ— এই পাঁচটি রাষ্ট্র। এমনকি পিছিয়ে নেই যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলিও। ব্রিটেনে মহিলা নির্যাতনের হার ২৪ শতাংশ। সহিংসতার পরিমাণ সবথেকে কম দক্ষিণ ও পূর্ব ইউরোপ এবং পূর্ব-মধ্য এশিয়ায়।
আরও পড়ুন
পেঁপের আচার তৈরি করে চমক ‘বিপন্ন’ বিরহড় মহিলাদের
‘হু’ ডিরেক্টর ট্রেডোস ঘেরবায়াস জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র জীবনসঙ্গীই নন, অন্যান্য আত্মীয়দের কাছেও যৌন নির্যাতনের ঘটনা চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি স্বামী বা পুরুষসঙ্গীর বলপূর্বক যৌনতাকেও ধর্ষণ হিসাবে ধরা হয়েছে। পারস্পরিক সম্মতি ছাড়া যে-কোনো যৌনতাই ঘৃণ্য অপরাধ এবং ধর্ষণের সমতুল্য।
২০১৬ সাল থেকেই মহিলা সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও পরিকাঠামো গড়ে তুলতে তহবিল গঠন জোর দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.২ কোটি থেকে ৪৪.৯ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু বাড়তে থাকা নির্যাতনের সামনে এই তহবিল সামান্যই। দেখতে গেলে যার বিশ্বের সমস্ত দেশের সম্মিলিত বাজেটের মাত্র ০.৩৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন
১ বছরে ২৩৭২২টি অভিযোগ, মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনায় রেকর্ড ২০২০-তে
তবে শুধু কি আন্তর্জাতিক সংস্থাদের পদক্ষেপেই সমাধান মিলবে এই সমস্যার? একদমই তেমনটা নয়। বরং এগিয়ে আসতে হবে প্রতিটি দেশের প্রশাসনকে। জোর দিতে হবে মহিলা ক্ষমতায়নে, চালাতে হবে সচেতনতামূলক প্রচার। সেইসঙ্গে শক্ত করতে হবে আইনি পরিকাঠামো। তা না হলে ভবিষ্যতে আরও ভয়ঙ্কর আকার নেবে এই সংকট। যা সংকটময় করে তুলবে মানব সমাজে নারী-স্বাধীনতাকে…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গার্হস্থ্য হিংসায় বন্দি মহিলাদের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেবে কলেজ পড়ুয়ারাই!