‘এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি’— নবজাতকের কাছে এমনই অঙ্গীকার রেখেছিলেন কবি। এই অঙ্গীকার আমাদের সবারও বটে। হাজার হোক, তাদের হাত ধরেই তো পৃথিবীর এই বিশাল সভ্যতা এগিয়ে যাবে। কিন্তু সত্যিই কি ‘বাসযোগ্য’ করতে পেরেছি আমরা? এমনই প্রশ্ন তুলে দিল একটি রিপোর্ট। সেখানকার বক্তব্য অনুযায়ী, এই মুহূর্তে ভারতে প্রতি আট মিনিটে একটি করে শিশু নিখোঁজ হচ্ছে। বছরের হিসেবে দেখলে, প্রতি বছর এই নিখোঁজের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে এক লাখ!
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এমন ভয়ংকর পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, শুধু কেরালাতেই ২০১৯-এ ৪৮৭ জন শিশু নিখোঁজ হয়েছে। এমনকি এক মাসে ৩০ জনেরও নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে। এবং এই সংখ্যাটা বিগত দুই তিন বছরে বাড়ছে। এমনও হয়েছে, কেরালাতে ১৫ দিনের মধ্যে ১৩ জন শিশুর হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুধু কেরালাতেই নয়, এমন অবস্থা ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মহারাষ্ট্রে। প্রায় ১০ হাজারের ওপর শিশু নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে ওই রাজ্যে। আর এদের মধ্যে বেশিরভাগই মেয়ে।
আরও পড়ুন
শরণার্থী শিশুদের মধ্যে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা, শৈশবকে এ কোন পৃথিবী দিচ্ছি আমরা?
এই ঘটনা যাতে কমে, সেজন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ‘ট্র্যাক চাইল্ড’ নামে একটি ওয়েবসাইটও লঞ্চ করা হয়েছে। তার মাধ্যমে কিছু শিশুকে ফেরত পাওয়া গেলেও, এখনও নিখোঁজ তালিকায় নাম রয়ে গেছে অনেকের। তারা কোথায় আছে, কী করছে, কেউ জানে না। এদেরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেটা জানতে পুলিশের তরফ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। বরং তা আরও খারাপ হচ্ছে। অনেকে ফিরে আসছে বটে, কিন্তু কফিনবন্দী হয়ে।
শিশুদের, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যগুলোর প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যাতে তাদের বেড়ে ওঠায় কোনো ত্রুটি না থাকে, সেই চেষ্টা করা হয় সব জায়গায়। কিন্তু আখেরে যে সেরকম কিছু হচ্ছে না, এই পরিসংখ্যানগুলো সেটাই প্রমাণ করে দেয়। নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন মেয়েরা। শিশুরাও যে সেই তালিকার বাইরে নয়, সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে বারবার। তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোথায় সুরক্ষিত? এরপরেও যদি দেশজুড়ে কড়া পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, বিপদ ঘনিয়ে আসবে আমাদের মধ্যেই।