বাধ্যতামূলক শ্রমিক থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের উপদেষ্টা, খেম লালের জীবন যেন রূপকথা

মাত্র ৬ বছর বয়স থেকে শ্রমিকের কাজ শুরু করতে হয় খেম লাল খাতেরজি (Khem Lal Khaterji)। না, রোজগারের জন্য নয়। কারণ সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও দুবেলা খাবার জুটত না তাঁর। পরিশ্রম করতে হত নিতান্ত বাধ্য হয়েই, যাকে বলে বাধ্যতামূলক শ্রম। স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরেও ভারতের নানা জায়গায় এখনও থেকে গিয়েছে এমনই দাসপ্রথা। অমানবিক এই প্রথার শিকার হয়েছিলেন খেম। তবে সেই ভয়ঙ্কর দিন পেরিয়ে এখন তিনি নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু নিজের মতো করে জীবন কাটিয়ে না দিয়ে তিনি এই অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি বর্তমানে কেন্দ্র সরকারের পাচার-বিরোধী বিলের (Anti Trafficking Bill) খসড়া তৈরির কাজও করছেন তিনি।

উত্তরপ্রদেশের একটি দরিদ্র দিনমজুর পরিবারের সন্তান খেম লাল খাতেরজি। জন্মের সময় তাঁদের নিজস্ব একটি ঘরও ছিল। কিন্তু ক্রমশ দেনার দায়ে সবই বিক্রি হয়ে যায় এক ঠিকাদারের কাছে। খেমের বয়স তখন মাত্র ৬ বছর। বাবা-মায়ের সঙ্গে ক্রীতদাসের মতোই জীবন কাটাতে হয় তাঁকেও। ইঁটভাটায় কয়লা ভাঙা, আগুন জ্বালানো থেকে শুরু করে মাটির দলা তৈরি, সবরকম পরিশ্রমের কাজই করতে হত তাঁকে। এক একদিন ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেও ন্যূনতম দুবেলা খাবার জুটত না। এই সময়েই খেমের মনে জেদ চেপে যায়, নিজের পায়ে তাঁকে দাঁড়াতেই হবে। ১৩ বছর বয়সে প্রথম পালিয়ে গিয়ে স্কুলে ভর্তির চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু সেবারে আবার ঠিকাদারের হাতে ধরা পড়ে যান। কাজ থেকে পালিয়ে স্কুলে যাওয়ার ‘অপরাধে’ অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে হয় তাঁকে। লোহা গরম করে গায়ে ছ্যাঁকাও দেওয়া হয়।

তবে কিছুদিনের মধ্যেই একটি এনজিও উদ্ধার করে খেম এবং তাঁর আরও কয়েকজন কমবয়সী সহকর্মীকে। এই এনজিওর মাধ্যমেই শুরু হয় পড়াশোনা। এই প্রথম মানুষের মতো বাঁচার সুযোগ পান তিনি। তবে সুস্থ জীবনে ফিরেও নিজের সেই ভয়াবহ অতীতকে ভুলে যেতে পারেননি তিনি। সমস্ত ধরনের বে-আইনি শ্রম বন্ধ করার জন্য গতবছরই তিনি গড়ে তুলেছেন ‘শ্রমিক অধিকার অউর ন্যায় সংগঠন’। পাশাপাশি মানব পাচার বিরোধী বিল তৈরিতে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সঙ্গেও। তাঁকেও পাচার করার পরিকল্পনা চলছিল, কিন্তু তার আগেই এনজিও মারফত সুস্থ জীবনে ফিরে আসেন তিনি। তবে কীভাবে মানুষ পাচার হয়ে যায়, তা একেবারে কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। ভবিষ্যতে সমস্ত ধরনের পাচার বন্ধ করাই এখন তাঁর লক্ষ্য।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চন্দ্রকেতুগড় থেকে একাধিক প্রত্নসামগ্রী পাচার, প্রতারিত বহু জাদুঘরও