নদীর ধারে বালির ভেতর থেকে উঠে এসেছে একটি খুলি। একটু ভাঙাচোরা, বেশ পুরনোই হবে। কিন্তু হঠাৎ এরকম নরখুলি উঠে আসলে কার ভালো লাগে বলুন! কিন্তু এর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত ইতিহাসের। আফ্রিকার একটা গোটা গ্রামের হারিয়ে যাওয়ার গল্প। সেইসঙ্গে, সেখানকার সবচেয়ে পুরনো সুনামির আক্রমণ…
২০১০ সালের ঘটনা। পূর্ব আফ্রিকার তানজানিয়ার মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে পাঙ্গানি নদী। হঠাৎই কয়েকজন পড়ুয়া সেখানে একটি মানুষের মাথার খুলির সন্ধান পায়। খবর পাওয়ার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষকরা এখানে আসেন। খুলিটা যে বেশ পুরনো, তাতে সন্দেহ নেই। পরে পরীক্ষা শুরু হয়। পরে ওই অঞ্চলেই নানা জায়গায় খোদাই করা শুরু হয়। ২০১৭ সাল পর্যন্ত সেখানে নানা জায়গায় এইরকমই নরকঙ্কাল ও খুলি মেলে। হয়ত এটা প্রাচীন কোনো কবরস্থান ছিল। কিন্তু সেই সম্ভাবনা দানা বাঁধেনি গবেষকদের মনে। একেই এটি নদীর একদম ধারে; তার ওপর কবরস্থান হলে একটা নির্দিষ্ট ভাবে দেহগুলি রাখা থাকত। কিন্তু এলোমেলো, ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল সেই দেহগুলো।
এরপরই গবেষণার ওপর আরও জোর দেয় প্রত্নতাত্ত্বিকরা। শুধু তাই নয়, পূর্ব আফ্রিকার ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতির ওপরও নজর দেওয়া হয়। সেখানেই উঠে আসে একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য। যে খুলি ও হাড় পাওয়া যায়, ওগুলো মোটামুটি হাজার বছর পুরনো। যেখান থেকে এগুলো পাওয়া গেছে সেখানে একসময় মৎস্যজীবীদের গ্রাম ছিল। একদম নদী ও সমুদ্রের ধারে। পাঙ্গানি নদী, আর ভারত মহাসাগর। বসতি গড়ে ওঠার পক্ষে বেশ ভালো। কিন্তু এর মধ্যেই এসে গেল দুর্যোগ।
‘জিওলজি’ জার্নালে গবেষকরা জানিয়েছেন, এখান থেকেই তাঁরা সন্ধান পান ওই অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো সুনামির। মোটামুটি হাজার বছর আগেই পূর্ব আফ্রিকার ওই অংশে আছড়ে পড়েছিল বীভৎস ঝড়। সঙ্গে সুনামি। তখন এত ব্যবস্থা ছিল না। ওই সুনামিতে গোটা গ্রামট ধ্বংস হয়ে যায়। সমস্ত মানুষই মারা যায়। অনেকে জলের সঙ্গেই ভেসে চলে গিয়েছিল; আবার অনেকের দেহ সেখানেই চাপা পড়ে যায়। সেটাই গবেষকদের সামনে এসেছে। সেইসঙ্গে সামনে এসেছে পূর্ব আফ্রিকার উপকূলের প্রথম সুনামির প্রসঙ্গ। এই সন্ধান নিয়ে গোটা বিজ্ঞানীমহল উল্লসিত।
ছবি- ডাল.সিএ