লিপির প্রাচীনতম নিদর্শন, বয়স ৭৫০০ বছর!

ব্রোঞ্জ যুগে বা নব্যপ্রস্তর যুগের শেষ লগ্নে লেখালিখির সূচনা হয় মানব সভ্যতায়। দীর্ঘদিন এমনটাই বিশ্বাস করেছেন গবেষকর। বিশ্বের প্রাচীনতম গ্রন্থ হিসাবে ধরে নেওয়া হয়েছে ইরান থেকে প্রাপ্ত গিলগামেশ মহাকাব্যকেই। তবে ১৯৯৩ সালে আশ্চর্য এক আবিষ্কার সম্পূর্ণভাবে বদলে দেয় গবেষকদের এই ধারণা। অ্যারিস্টটলস্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক ডঃ জর্জ হারমুজিয়াদিস ম্যাসিডোনিয়ার (Macedonia) কাস্টোরিয়া হ্রদ তীরবর্তী ডিসপিলিও (Dispilio) গ্রাম থেকে উদ্ধার করেন এক প্রাচীন শিলালিপি। যার বয়স অন্ততপক্ষে ৭ হাজার বছর! মানব সভ্যতার ইতিহাসকে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল এই আশ্চর্য শিলালিপি। যা পরিচিত ডিসপিলিও ট্যাবলেট নামে।

অবশ্য শিলালিপি বললে খানিকটা ভুলই হবে। গিলগামেশ মহাকাব্য যেমন লেখা হয়েছিল মাটির ট্যাবলেটে, ঠিক সেভাবেই ডিসপিলিও ট্যাবলেটও লেখা হয়েছিল পোড়া মাটির ব্লকে। কার্বন ডেটিং অনুযায় আনুমানিক ৫২৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি হয়েছিল এই বিশেষ ট্যাবলেটটি। অন্যদিকে সুমেরিয় লিপির জন্মই হয় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার বছর আগে। অর্থাৎ, সুমেরিয়দের থেকেও সহস্রাধিক বছর পুরনো এই ট্যাবলেট। কিন্তু কারা রচনা করেছিল এই ট্যাবলেট? কীই বা লেখা আছে তাতে? 

গবেষক হারমুজিয়াদিসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই ট্যাবলেটে যে ভাষার ব্যবহার করা হয়েছে তা আসলে মাইসেনিয়ান ভাষা। অভিমত, গ্রিকদের ব্যবহৃত লিনিয়ার-বি লিপির সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে এই লিপির। আশ্চর্যের বিষয় হল, গ্রিকরা ফিনিশিয়ানদের থেকে লিখতে শিখেছিল ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তাছাড়া লিপির আকৃতিগত মিল থাকলেও গ্রিক ভাষা তো বটেই ব্যবিলনীয়, সুমেরিয় বা ফিনিশিয়ানদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এই বর্ণমালা। কাজেই এখনও পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি এই বিশেষ ট্যাবলেটটির। এমনকি এই ভাষার বিবর্তনে কীভাবে জন্ম নিয়েছিল মাইসেনিয়ান ভাষা— সে-ব্যাপারেও স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই গবেষকদের। নেই কোনো প্রমাণও।

পাশাপাশি এই লিপির পাঠোদ্ধার করতে না পারার আরও একটি কারণ হল, যথেষ্ট পরিমাণ নমুনার অভাব। হ্রদের তলদেশ থেকে প্রাপ্ত ৭৫০০ বছরের পুরনো এই ট্যাবলেট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গিয়েছিল বহু অংশেই। তাছাড়া একটি মাত্র ট্যাবলেট খুঁজে পাওয়ায়, এই ভাষায় লিখিত দ্বিতীয় কোনো পাঠ্যের সঙ্গে তার তুলনা করাও অসম্ভব গবেষকদের পক্ষে। 

বর্ত্মানে গ্রিসের জাতীয় লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে এই প্রাচীনতম ট্যাবলেট। চলছে গবেষণা। অনেকের মতে, গ্রিসে প্রচলিত ছিল কোনো প্রাচীন ভাষা, যা গৃহযুদ্ধের আবহে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল চিরকালের মতো। আবার অনেকের বিশ্বাস, মধ্যপ্রাচ্য থেকেই এই ট্যাবলেট পৌঁছেছিল ম্যাসিডোনিয়ায়। ডিসপিলিও ট্যাবলেট আবিষ্কারের পর কেটে গেছে ৩ দশক, অথচ আজও সমাধান হয়নি এই রহস্যের। তবে এই লিপির পাঠোদ্ধার হলে গিলগামেশকে টপকে বিশ্বের প্রাচীনতম গ্রন্থ হয়ে উঠবে এটিই, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

Powered by Froala Editor