প্রায় ২৫০ বছর পর অবশেষে আবার অরণ্যের অধিকার ফিরে পেতে চলেছেন অস্ট্রেলিয়ার (Australia) কুকু ইয়ালানজি (Kuku Yalanji) উপজাতির মানুষরা। সম্প্রতি কুইন্সল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এমনটাই। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে ডাইনট্রি অরণ্য সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন বৃষ্টি অরণ্য। আর এই অরণ্যকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে কুকু ইয়ালানজি উপজাতির কয়েক হাজার বছরের সংস্কৃতি। কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসনে পুরোপুরি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন তাঁরা। এরপর অস্ট্রেলিয়া আলাদা দেশ হিসাবে গড়ে উঠলেও উপজাতিরা প্রায় কেউই নিজেদের অধিকার ফিরে পাননি। বরং নিজের দেশেই সহ্য করে যেতে হয়েছে অপমান আর লাঞ্ছনা। অবশেষে দৃশ্যটা একটু একটু করে বদলাচ্ছে। আর এর মধ্যেই কুকু ইয়ালানজি উপজাতিও ফিরে পেতে চলেছে নিজেদের অধিকার।
প্রাচীন গন্ডোয়ানা ভূখণ্ডের উপরেই গড়ে উঠেছিল বিরাট এক বৃষ্টি অরণ্য। সেই গন্ডোয়ানা ভেঙে গড়ে উঠেছে আজকের সমস্ত মহাদেশ। বৃষ্টি অরণ্যের একটা অংশ চলে যায় আন্টার্কটিকায়। সেখানে বরফের স্তূপের নিচে সবই চাপা পড়ে যায়। কিন্তু প্রায় ১৮০ মিলিয়ন বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার বুকে টিকে থাকে বাকি অঞ্চলটুকু। ১ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টরের সেই বনভূমিই ডাইনট্রি বনভূমি নামে পরিচিত। কুইন্সল্যান্ডের বুকে সম্ভবত এই একটি বৃষ্টি অরণ্যই কোনোদিন শুকিয়ে যায়নি। সেইসঙ্গে গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রাণী ও উদ্ভিদের এক জটিল বাস্তুতন্ত্র। এই অরণ্যে রয়েছে অন্তত ৩ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ। রয়েছে ১০৭টি স্তন্যপায়ী, ৩৬৮টি পাখি এবং ১১৩টি সরীসৃপের প্রজাতি।
২০২০ সালের দাবানলে ডাইনট্রি বনভূমির একটা অংশেরও বিরাট ক্ষতি হয়েছিল। আর সেই অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই বনভূমির সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে প্রশাসন। সেইসঙ্গে প্রশাসনিক কর্তারা এটাও বুঝতে পেরেছেন, উপজাতি প্রজাতির মানুষের দীর্ঘদিনের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে এই অরণ্যকে বাঁচানো সম্ভব নয়। আর সেই কারণেই এইবার তাঁদের হাতেই বনভূমির অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ডাইনট্রি বনভূমিকে আন্তর্জাতিক ঐতিহ্য বলে ঘোষণা করেছিল ইউনেস্কো। সেই থেকেই পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাও জোড়ালো হয়ে উঠেছে। আর এবার সেই শিল্পেরও নেতৃত্ব দেবেন উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষরাই। কুইন্সল্যান্ড সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সমস্ত পরিবেশকর্মী এবং সাধারণ মানুষ।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অরণ্য হারিয়ে ঠাঁই শহরে, বৈষম্যে জেরবার ব্রাজিলের প্রাচীন জনগোষ্ঠী