পাক ধরেছে চুলে। খানিকটা স্থূল হয়েছে চেহারাও। কিন্তু এতটুকু ঘাটতি নেই উৎসাহে। ডগ ক্রোওয়েল। ক্রিকেটের প্রতি প্যাশনের এই বিরল দৃষ্টান্ত তিনি। ৯১ বছর বয়সেও ২২ গজে বজায় রেখেছেন দুর্দান্ত পারফর্মেন্স। ক্রিকেটের প্রতি তাঁর প্যাশন— এক বিরল দৃষ্টান্ত। আন্তর্জাতিক দলে না খেললেও, এখন অস্ট্রেলিয়ায় রীতিমতো সেনসেশনের কারণ এই ‘তরুণ’ ক্রিকেটার।
বিগত ১৫ বছর ধরেই তিনি খেলছেন অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট লিগ ‘ভেটেরান্স ক্রিকেট’-এ। এই লিগে খেলার শর্ত মাত্র দুটি। প্রথমত, যাঁরা ৪০ বছর বয়সে বা তার আগেই ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন, তাঁরাই খেলতে পারবেন এই লিগ। দ্বিতীয়ত, অংশগ্রহণকারীর বয়স হতে হবে ষাটোর্ধ্ব। অর্থাৎ, লিগের সমস্ত খেলোয়াড়ই প্রবীণ। তবে ৯১ বছর বয়সে ক্রিকেট পিচে দাঁড়িয়ে মাঠ কাঁপানোর রেকর্ড কারোরই নেই। শুধু অস্ট্রেলিয়া কেন, গোটা পৃথিবীতে এমন দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দায়। তবে শুরুতে ষাটোর্ধ্ব বিভাগে খেললেও বর্তমানে তাঁর পারফর্মেন্সের নিরিখে তাঁকে পঞ্চাশোর্ধ্ব দলে রাখা হয়েছে। এমনকি বিগত কয়েক বছরে তাঁর ধারাবাহিক ফর্মের দৌলতে এখন বেশ ভালোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়ার এই প্রফেশনাল ক্রিকেট লিগ।
তবে ক্রিকেটে এই প্রথম না। ১৬ বছর বয়সে প্রথম ব্যাট ধরেছিলেন ডগ ক্রোওয়েল। নিউ সাউথ ওয়েলসের উইন্টনের একটি কৃষক পরিবারে জন্ম তাঁর। সেই সম্প্রদায়েরই বেশ কিছু তরুণ মিলে তৈরি করেছিলেন একটি দল। পরে সেই দলই হয়ে ওঠে উইন্টন ক্লাব। তবে খুব বেশিদিন ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জেরে রেশ পড়ে ক্রিকেট জীবনে। সেই সংকটের সময় জ্বালানি খরচ করে ২০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে মাঠে পৌঁছানো তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব ছিল।
তবে ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসায় ভাটা পড়েনি এতটুকু। নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন পেশাদার ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় আম্পেয়ারিং-এর ভূমিকা পালন করেছেন ডগ। তারপর আবার ৭৬ বছর বয়সে তাঁর ক্রিকেটে অভিষেক ‘ভেটেরান্স ক্রিকেট লিগ’-এ। তরুণ বয়সের সেই উইন্টন ক্লাবের হয়েই বর্তমানে খেলে চলেছেন তিনি। তবে বিগত ৭৫ বছরে বহু ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে গেছে তাঁর স্বপ্নের ক্লাব। গাঁটছড়া বেঁধেছে অন্যান্য ক্লাবের সঙ্গে।
আরও পড়ুন
ঘরোয়া ক্রিকেটে অসামান্য রেকর্ড, তবু ব্রাত্য ‘ভারতের ব্র্যাডম্যান’ কার্তিক বসু
তবে বিনয়ী ডগ নিজেকে স্বীকৃতি দিতে চান না অস্ট্রেলিয়ার প্রবীণতম ক্রিকেটার হিসাবে। আসলে বয়স বাড়লেও মনের দিক থেকে এখনও ঝকঝকে তরতাজা রয়েছেন তিনি। তাঁর কথায় এই বয়সে ক্রিকেট খেলা বরং আরও সহজ হয়ে গেছে। কেন না, বিপক্ষের বোলাররা অনেক ধীর গতিতে বল করেন। আর সেই জন্যই ব্যাটের সঙ্গে বল কানেক্ট করতে যথেষ্ট সময় পান তিনি।
আরও পড়ুন
৪৯ বছর বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক! আজও অক্ষত ১৮৭৭ সালের সেই রেকর্ড
তবুও ৯১ বছর বয়সে এই ফিটনেস অবাক করার মতোই। শরীর চাঙ্গা রাখতে প্রতিদিন রীতিমতো কঠিন অনুশীলন করে চলেছেন ডগ। যোগাভ্যাসের পাশাপাশি ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেট প্র্যাকটিস তো করেনই; সেইসঙ্গে প্রতি সপ্তাহে দু-তিন দিন নিয়ম করে হাজির হন টেনিস কোর্টে।
আরও পড়ুন
৩৫৫০ কিমির দুর্গম পথ অতিক্রম করেছিলেন ৬৭-এর এই তরুণী
উইন্টন ক্লাব বর্তমানে যে শুধু ভেটেরান্স ক্রিকেটই খেলে তেমনটা নয়। তরুণতুর্কিদের নিয়েও পেশাদার ক্রিকেটে অংশ নেয় এই দল। রয়েছে আলাদা অ্যাকাডেমিও। সেখানেও মাঝেমধ্যেই হাজিরা দেন ডগ ক্রোওয়েল। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী দু’জনেই বর্তমানে সেই ক্লাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাঁর ধারাবাহিক ফর্ম এবং ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা— দুই-ই নতুন করে অনুপ্রেরণা জোগায় তরুণদের। জাতীয় দলে খেলার সুযোগ না পেলেও, তাঁর বিশ্বাস একদিন এই অখ্যাত ক্লাব থেকেই উঠে আসবে তরুণ তারকা। সেই দিনটা না দেখে ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে চান না ডগ ক্রোওয়েল…
Powered by Froala Editor