আন্তর্জাতিক মহিলা ক্রিকেটের জীবন্ত ইতিহাস ছিলেন তিনি। মহিলা ক্রিকেটের পথিকৃৎও বলা চলে তাঁকে। এলিন অ্যাশ (Eileen Ash)। গতকাল চিরবিদায় নিলেন বিশ্বের প্রবীণতম টেস্ট ক্রিকেটার। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন এলিন। গতকাল ইংল্যান্ডের হাইবারিতে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ১১০ বছর।
১৯৩৪ সাল। প্রথমবারের জন্য পৃথিবীর বুকে আয়োজিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক মহিলা টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ। তার বছর তিনেক পরই ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে অভিষেক এলিনের। যদিও তিনি ক্রিকেটের ময়দানে নেমেছিলেন তারও প্রায় এক দশক আগে। ১৯১১ সালে জন্ম এলিনের। মাত্র ১৮ বছর বয়সে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করার সুযোগ পান এলিন। সেই সময় থেকেই ক্রিকেটের ময়দানে আনাগোনা শুরু হয় তাঁর। ক্রিকেটার তকমার আড়ালেই গোয়েন্দা পরিচয় লুকিয়ে বাইশ গজে ডানা মেলে ধরেছিলেন এলিন। ক্রিকেট দুনিয়ায় এমন বর্ণময় কেরিয়ার দ্বিতীয় কোনো ক্রিকেটার নেই বললেই চলে।
১৯৩৭ সালে ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক হলেও, একটানা খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি এলিন। তখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। দোরগোড়ায় হাজির বিশ্বযুদ্ধ। ‘এমআই ৬’-এর হয়ে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নামতে হয়েছিল তাঁকে। সাময়িকভাবে থমকে গিয়েছিল তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার। বিশ্বযুদ্ধের পর আবার ক্রিকেটের ময়দানে প্রত্যাবর্তন করেন এলিন। তবে খুব বেশি দিন খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৯৪৯ সালে অবসর নেন ক্রিকেট দুনিয়া থেকে।
১২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে মাত্র ৭টি ম্যাচ খেলেছেন এলিন। ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসারের সংগ্রহে রয়েছে ১০টি উইকেট। নেতৃত্ব দিয়েছেন ব্রিটিশ মহিলা দলকেও। তাছাড়াও ২২টি প্রথম সারির ম্যাচ খেলেছেন এলিন। সেখানেও মেলে ধরেছেন নজরকাড়া পারফর্মেন্স।
আরও পড়ুন
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম শিক্ষার্থী, ৮৭ বছরে স্নাতকোত্তর শ্রীলঙ্কার বৃদ্ধা
পরবর্তীতে, ক্রিকেট এবং ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস থেকে অবসর নেওয়ার পর সময় কাটানোর জন্য গলফকে বেছে নেন এলিন। তাঁর দক্ষতা অবাক করেছে সেখানেও। আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হয়ে না উঠতে পারলেও, ঘরোয়া গলফে পেশাদার খেলোয়াড় হিসাবে বেশ নামডাকও ছিল তাঁর। খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন ৯৮ বছর বয়স পর্যন্ত।
আরও পড়ুন
সংক্রমণ এড়াতে আন্তর্জালেই পুজো-পরিক্রমা প্রবীণদের
তবে ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক অটুট ছিল শেষ বয়সেও। ২০১৭ সালে মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালেও হাজির হয়েছিলেন তিনি। তাঁর বাজানো ঘণ্টাতেই শুরু হয়েছিল ভারত-ইংল্যান্ডের দ্বৈরথ। ২০১৮ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নরউইচে মহিলাদের জন্য ক্রিকেট অ্যাকাডেমিও খুলেছিলেন এলিন। সব মিলিয়ে এলিন এক বর্ণময় চরিত্র।
আরও পড়ুন
প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে অর্থনীতি-বিষয়ক রিপোর্ট, ভারতের ইতিহাসে প্রথম
শতায়ু হলেও, তাঁর শারীরিক সক্ষমতা ছিল রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতোই। নিয়মিত যোগচর্চা করতেন শেষ বয়সেও। একাধিক টেলিভিশন শো-তে এক নিঃশ্বাসে বলে যেতে পারতেন মহিলা ক্রিকেটের ইতিহাস। সেই চলমান ইতিহাসই যেন হঠাৎ করে থমকে গেল এলিনের চিরবিদায়ে…
Powered by Froala Editor