লকডাউনের বাজারে অফিস, কারখানার অবস্থা বেশ কাহিল। বন্ধের মুখে অনেক কোম্পানিও। অথচ এই ছবির ঠিক বিপরীত ইতিহাস এই কোম্পানিটির। খাতায় কলমে ‘কন্সট্রাকশন কোম্পানি’, নিবাস জাপানে। এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না। আসল রহস্যটা লুকিয়ে আছে সংখ্যায়। দশ কুড়ি নয়, ১৪৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে এই কোম্পানিটি! জাপানের কঙ্গো গুমি কোং লিমিটেড সেই অদ্ভুত ইতিহাসেরই আরেক নাম…
সাল ৫৭৮। জাপানের আসুকা পিরিয়ডের শুরুর সময়। সিংহাসনে রাজা ইয়োমেয়ি, সঙ্গে রয়েছেন তাঁর পুত্র, শোতকু। সেইসময় বেশ কিছু কারণে কোরিয়া থেকে বেশ কিছু মানুষ চলে এসেছিলেন জাপানে। তাঁদের মধ্যেই ছিল কঙ্গোরা। জাপানে এসে ছোটখাটো মন্দির তৈরি করছেন তাঁরা। বলা ভালো, পারিবারিক গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এসব। এটা এমন একটি সময়, যখন জাপানের ভেতর একটু একটু করে বিকশিত হচ্ছে বৌদ্ধহরম। বুদ্ধের শান্তির কাছে মাথা নত করে বসতে চাইছেন জাপানিরা। সেই রেশ গিয়ে পড়ল প্রাসাদেও। রাজপুত্র শোতকু ঠিক করলেন, বুদ্ধের উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ মন্দির তৈরি করবেন। কিন্তু তৈরি করবেন কে? সেই সময় তাঁর নজরে পড়ল কঙ্গো পরিবারের দিকে।
পরিবারের পক্ষ থেকে এগিয়ে এলেন শিগেমিৎসু কঙ্গো। রাজপুত্র শোতকু তাঁর হাতেই মন্দির তৈরির ভার দিলেন। ওসাকার বুকে তৈরি হল জাপানের প্রথম ও প্রাচীনতম বুদ্ধ মন্দির, শিতেননো-জি মন্দির। তৈরি হল একটি ইতিহাস; একটি নয়, দুটি। মন্দিরের পাশাপাশি শিগেমিৎসু ঠিক করলেন, এই কাজটিকে পারিবারিক ব্যবসায় পরিণত করলে কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমনই কাজ। তৈরি হল ‘কঙ্গো গুমি কোং লিমিটেড’। সালটা খেয়াল করুন আবার— ৫৭৮ খ্রিস্টাব্দ!…
তারপর থেকে সময় যত এগিয়েছে, কঙ্গো গুমির রথের চাকাও এগিয়েছে তরতরিয়ে। বিশেষত বৌদ্ধ মন্দির বানাতে এঁদের জুড়ি মেলা ভার। এ যেন স্বয়ং ইতিহাসের গড়িয়ে চলা। একে একে জাপানের প্রধান ও বিখ্যাত স্থাপত্যগুলির সঙ্গে জুড়ে যাবে এই প্রতিষ্ঠানের নাম। সে শিতেননো-জি মন্দিরই হোক, বা ষোড়শ শতকের বিখ্যাত ওসাকা দুর্গ, কাইরাকু-এন বাগান— সব জায়গায় কঙ্গো গুমি স্বমহিমায় বিরাজ করছে নিজের কাজ দিয়ে। বহু বছর পারিবারিক ব্যবসা হিসেবেই বেড়ে উঠেছিল কোম্পানিটি। পরবর্তীকালে ব্যবসার পরিসর আরও বেড়ে গেলে নিজেদের গণ্ডিটিও বাড়িয়ে দেয় এরা। ওসাকায় তৈরি হয় প্রধান কেন্দ্র। নানা সময় ঝড় এসেছে, জাহাজটি নড়বড় করেছে ভালোমতোই। কিন্তু থামেনি পথচলা। কঙ্গো গুমি হয়ে উঠেছে বিশ্বের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান, যা বন্ধ হয়নি আজও…
একটা বাণিজ্যিক সংস্থা কীভাবে নিজেই ইতিহাস হয়ে গেল আস্তে আস্তে! এতগুলো যুদ্ধ দেখল, এত রাজা-রাজড়াদের সমাবেশ দেখল, দু’দুটো পারমাণবিক বোমার ধাক্কা সহ্য করল। আর দেখল কীভাবে চাকা বদলে দেয় পথের ঠিকানা। সেই রাজারা আজ নেই, তাদের রূপ বদলেছে, ধরণ বদলেছে। বদলেছে বিশ্বের রং। তারই মাঝে দাঁড়িয়ে কঙ্গো গুমি কোং লিমিটেড। জলজ্যান্ত ইতিহাস হয়ে…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
৮৪ বছরের ব্যবসায় ইতি, পরাজয় স্বীকার ক্যামেরা কোম্পানি অলিম্পাসের