মরুভূমির বুকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ২ ডজন উট (Camels) এবং ঘোড়া (Equids)। না জীবন্ত নয়, সবই পাথরের মূর্তি। তবে তাদের আকার জীবন্ত প্রাণীদের চেয়ে একটুও ছোটো নয়। আরবের (Arab) উত্তরাঞ্চলে প্রাপ্ত এই মূর্তিগুলির বয়স জানা গিয়েছে সম্প্রতি। আর তাতেই অবাক ঐতিহাসিকরা। এক একটি মূর্তির বয়স স্টোনহেঞ্জেরও দ্বিগুণ। এমনটাই জানাচ্ছে গবেষণা। আর প্রাগৈতিহাসিক (Prehistoric) এইসব মূর্তির আবিষ্কার যেন মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসকেই অনেকটা পিছিয়ে দিল।
২০১৮ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয় এই মূর্তিগুলি। বিস্তীর্ণ মরুপ্রান্তরের আশেপাশে মানুষের বসতির আর কোনো চিহ্ন নেই। কেবল ২৪টি মূর্তি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এমন একটা আবিষ্কারে বিস্মিত হয়েছিলেন সকলেই। তবে তখন আন্দাজ করা হয়েছিল মূর্তিগুলির বয়স হয়তো ২ হাজার বছরের কাছাকাছি। সাম্প্রতিক আবিষ্কারে সেই সময়কাল পিছিয়ে গেল ৬ হাজার বছরেরও বেশি। ‘জার্নাল অফ আর্কিওলজিক্যাল সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে মূর্তিগুলি তৈরি হয়েছে আনুমানিক ১০ হাজার থেকে ৮ হাজার বছর আগে। যা কিনা পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন দুই স্থাপত্য স্টোনহেঞ্জ (৫ হাজার বছর) এবং গিজার পিরামিডের (৪৫০০ বছর) চেয়েও প্রাচীন। আর এই হিসাব অনুযায়ী মূর্তিগুলি মানুষের তৈরি সবচেয়ে প্রাচীন প্রাণী ভাস্কর্য। তবে কারা এবং কী কারণে উট এবং ঘোড়ার মূর্তি তৈরি করেছিল, তা এখনও জানা যায়নি।
যে কোনো স্থাপত্যের বয়স নির্ণয় করা ঐতিহাসিকদের কাছে অন্যতম কঠিন কাজ। কারণ কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে পাথরের বয়স নির্ণয় করে কোনো লাভ হয় না। তাই সবসময়ই নির্ভর করতে হয় আনুষাঙ্গিক তথ্যপ্রমাণের উপর। অথচ এখানে আশেপাশে মানুষের বসতির কোনো নিদর্শনই পাওয়া যায়নি। ফলে কাজটা রীতিমতো কঠিন ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা তাই বেশ কিছু অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। যেমন, প্রমাণ হিসাবে তাঁরা দেখিয়েছেন এই মূর্তিগুলিতে উট এবং ঘোড়াদের যে দৈহিক গঠন দেখানো হয়েছে, তা গৃহপালিত পশুদের মতো নয়। তাই ধারণা করা যায় মানুষ উট বা ঘোড়াকে পোষ মানানোর আগেই মূর্তিগুলি তৈরি হয়েছে। এছাড়া মূর্তিগুলির ওপরে যত ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছাপ রয়েছে, তাও প্রায় ১০ হাজার বছরের চিহ্ন বহন করে। এই মূর্তিগুলির কাছেই কিছু ঘোড়া ও উটের হাড় পাওয়া গিয়েছে। তাদের বয়সও ১০ হাজার বছরের কম নয়। এইসমস্ত প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই অনুমান করা যায় মূর্তিগুলি তৈরি হয়েছে ওই সময়েই।
তবে যেহেতু আশেপাশে কোনো বসতির চিহ্ন নেই, তাই অনুমান করা যায় যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষের হাতেই তৈরি হয়েছে মূর্তিগুলি। ঐতিহাসিকদের মতে, উট এবং ঘোড়াকে পোষ মানানোর আগেই তাদের পরিবহনের কাজে লাগাতে শুরু করেছে মানুষ। তবে একটা সন্দেহ এখনও থেকেই যাচ্ছে। ১০ হাজার বছর আগে আরব অঞ্চল আদৌ মরুভূমি ছিল না। তখন সেখানে রীতিমতো ঘাষ এবং জলের চিহ্ন ছিল। তাহলে মূর্তিগুলির মধ্যে ঘোড়ার চেয়ে উটের সংখ্যা বেশি কেন? তবে আরব অঞ্চল মরুপ্রধান না হলেও আশেপাশে কোনো মরু অঞ্চল থেকে যাযাবররা এসেছিলেন, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
Powered by Froala Editor