সেলাই মেশিনের সামনে বসে একমনে মাস্ক তৈরি করে চলেছেন এক ৮৯ বছরের বৃদ্ধা। আর ঘরের মধ্যে মিউজিক সিস্টেমে বাজছে বিটলসের একটি গান। ব্ল্যাকবার্ড গানের সেই বিখ্যাত লাইনটা মনে আছে নিশ্চই। 'টেক দিজ ব্রোকেন উইংস অ্যান্ড লার্ন টু ফ্লাই'। এই হতাশায় অবরুদ্ধ পৃথিবীতে এই গানটাই যেন মুক্তির স্বপ্ন দেখায়। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একদিন ঠিক জিতবে মানুষ। তারপর আবার স্বাভাবিক জনজীবনে ফিরে আসবে সবাই। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছেও তো সেই লড়াইটাই লড়ছেন শিকাগোর এই বৃদ্ধা। আর এমন দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠতেও বেশি সময় লাগেনি।
অন্যান্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মতোই সারাদিন সিনেমা আর টিভি সিরিজ দেখেই সময় কাটান টেরেসা প্রভো। এর মধ্যেই হঠাৎ একদিন করোনা সংক্রমণের খবর পেলেন। জানতে পারলেন, সরকারের নির্দেশে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে লকডাউন। এতে তাঁর নিজের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ ছিল না। কারণ এমনিতেই সারাদিন ঘরের মধ্যেই থাকেন টেরেসা। কিন্তু দেশের নানা প্রান্তে তাঁর পরিবারের যে অসংখ্য মানুষ ছড়িয়ে আছেন, তাঁদের জীবনটা ঠিক কীভাবে কাটবে এই কয়েকদিন? এই চিন্তাই বিব্রত করেছিল তাঁকে। হতাশার মধ্যে একটু স্নেহের উষ্ণতা পৌঁছে দিতে চাইলেন তাঁদের কাছে।
টিভিতেই তিনি জানতে পেরেছিলেন, করোনা ভাইরাসকে আটকাতে কাজে আসতে পারে মাস্ক। অতএব রাস্তায় বেরোতে হলে প্রত্যেকেই যেন মাস্ক পরে বেরোন। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্যই তাই একটি করে মাস্ক তৈরি করলেন টেরেসা। নাতি-নাতনিদের জন্য সেই মাস্কের উপর এঁকে দিলেন তাদের পছন্দের নানা চিহ্ন। টেরেসার কাছ থেকে এমন উপহার পেয়ে খুশি তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। আর তার এই কাজ সমবয়সী অন্যান্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও আকর্ষণ করেছে। অনেকেই এসে হাত লাগিয়েছেন তাঁর কাজে। আর কাজের নেশায় এখনও নিরলস সেলাই মেশিন চালিয়ে যাচ্ছেন টেরেসা।
পৃথিবীর প্রতিটা মানুষকে নিয়েই যে তাঁর পরিবার, এমনটাই মনে করেন টেরেসা। তাই তিনি নিজে যতগুলো পারবেন, মাস্ক তৈরি করে যাবেন। আর সেইসব মাস্ক পৌঁছে দেবেন পরিচিত মানুষজনের কাছে। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এভাবেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন টেরেসা। আর এই ছোট ছোট লড়াইয়ের ছবিগুলোই তো ভেঙে পড়া ডানায় ভর দিয়ে উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। যে স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলেন বিটলস ব্যান্ডের শিল্পীরা।