ইচ্ছে থাকলে কী না হয়! কোনো বাধাই আর বাধা লাগে না। এই আপাত হারিয়ে যাওয়া কথাগুলোকে আবার বিশ্বাসযোগ্য করে তুললেন হরিপদ চক্রবর্তী। বাঙালি চিরকালই অলস, ঘরকুনো – এই অপবাদকে আরও একবার প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করালেন তিনি।
নদীয়া জেলার শান্তিপুরের বড় গোস্বামীপাড়ার বাসিন্দা হরিপদবাবু। ইতিমধ্যেই ঘটিয়েছেন এক বিস্ময়কর ঘটনা। পায়ে হেঁটে সারা ভারতের প্রায় ৯০ শতাংশ জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছেন। জীবনের ৪৮ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন পায়ে হেঁটেই। এর আগে সাইকেলে বা দলবদ্ধভাবে পায়ে হেঁটে সারা দেশ ভ্রমণ করার নজির আছে, কিন্তু একক ভাবে পায়ে হেঁটে ভারতভ্রমণ সম্ভবত এই প্রথম।
পেশায় পুরোহিত এই অশীতিপর বৃদ্ধের সঙ্গে ৪৮ বছরের ভ্রমণ নিয়ে কথা বললে, এখনো তাঁর চোখেমুখে ফুটে ওঠে এক স্বপ্নিল যুবক। যিনি অতিক্রম করে যাচ্ছেন একে একে পিচগলা রাস্তা, মেঠোপথ কিংবা কখনো গাছেদের ছায়াঘেরা পথ। স্পর্শ করে যাচ্ছেন ভারতবর্ষের বিভিন্নতা, বিভিন্ন মানুষ, তাদের সংস্কৃতি, খাওয়ার দাওয়ার আরও অনেক কিছু। আর এইসব বিভিন্নতার মধ্যে ঐক্য স্থাপন করছেন একা হরিপদবাবু। এ যেন বিবিধের মাঝে মিলন মহান।
এই সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে তাঁর আপশোস, ভারতের প্রায় ৯০ শতাংশ জায়গাকে স্পর্শ করলেও এখনও নাগালের বাইরে থেকে গেছে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। কারণ, এক্ষেত্রে পায়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। একমাত্র ভরসা জলপথ বা আকাশপথ, যা তাঁর নিজের সামর্থ্যে কুলোবে না। তাই এক্ষেত্রে তাঁকে সরকারি বা কোনো বেসরকারি সহযোগিতার মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। যদি সহযোগিতা আসে তাহলে হয়তো তাঁর অখণ্ড ভারত স্পর্শ করার স্বপ্নটা সত্যি হতে পারে।
ভেবে দেখুন দৃশ্যটা একবার - হেঁটে যাচ্ছেন হরিপদবাবু, কাঁধে চটের ব্যাগ এবং হাতে ঝোলানো নাইলনের ব্যাগ। বর্তমান বিচ্ছিন্নতার যুগে কোথাও কি এই-ই হরিপদবাবুর নীরব প্রতিবাদ, নিজের মতো করে?