বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এক গ্রাম। নাম সারেঙ্গা। গ্রামের মেঠো রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছেন এক বৃদ্ধ। কোমরে বাঁধা গামছা, হাতে মস্ত একটি কোদাল। মলিন, শিরাওঠা হাতে আগলে রেখেছেন গাছ। শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘গাছদাদু’ নামেই যাকে চেনে গোটা সারেঙ্গা গ্রাম।
৮ বছর বয়স থেকে শুরু করে এখন ৭২। গাছেদের সঙ্গে আত্মীয়তার শেষ হয়নি এখনও। সাদা চুলের ভিড়ের মাঝেই টাটকা ছোটবেলার স্মৃতি। বাবার কাছেই এই কাজে হাতে খড়ি হয়েছিল শ্যামাপ্রসাদবাবুর। শুধুমাত্র গাছের অপরিসীম গুরত্বের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন ওইটুকু বয়েসেই। তারপর আস্তে আস্তে চামড়াতে ভাঁজ পড়লেও টানটান থেকে গেছে গাছ লাগানোর এই অভ্যেস, ইচ্ছে। এত বছর ধরে, একার চেষ্টায় ৫ হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন তিনি। গোটা গ্রামজুড়ে তাঁর 'হাতযশ'-ই ছায়া দেয় আজ। রাস্তার ধার, সেচ খাল, পুকুর পাড়— সমস্ত জায়গা ভরিয়ে দিয়েছেন গাছে। শুধু একা তিনি নন, তার এই অভ্যেসকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন নতুন প্রজন্মের ভিতরেও। একদল তাজা রক্ত ভিড় করেছে তাঁর কাছে। নাম ‘গ্রিন আর্মি’। শ্যামাপ্রসাদবাবুর সঙ্গেই আরো বেশি সংখ্যক গাছ লাগাতে চায় তারা। তাদের জলজ্যান্ত 'ইন্সপিরেশন' যে আজ গাছদাদু, বলা যায় দলের 'ক্যাপ্টেন'…
গোটা বিশ্বে প্রকৃতির ভয়াবহ আচরণের প্রেক্ষিতে এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব। প্রচারের তোয়াক্কা করেন না। কোনো স্বার্থও নেই তাঁর। বরং শান্ত ভাবে কাজটুকু করে যেতে চান শ্যামাপ্রসাদবাবু। স্বীকৃতিও পাননি সেরকম। অবশ্য তাতে কোনো হেলদোল নেই তাঁর। ভবিষ্যৎ কে অতল ছায়া দিতে গ্রাম বাংলায় এমন 'বৃক্ষপুরুষ' যেন ফিরে ফিরে আসে প্রতি প্রজন্মে।