একজন শিল্পীর কাছে তাঁর সৃষ্টিই গুরুত্ব পায় সবার আগে। সেখানে সবসময় আসে না টাকার চিন্তা। কিন্তু দিনের শেষে বাঁচতে গেলে তো সেটারও প্রয়োজন! অনেক শিল্পীই তাই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ে যান আজীবন। অরুণ কুমার মজুমদার সেই দারিদ্র্যের সঙ্গে যুঝতে থাকা শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর কাজ, তাঁর আঁকা, তাঁর কোলাজের অভিনবত্ব কোনও কিছুই দর্শকদের কাছে পৌঁছয়নি। এখনও, ৬৭ বছর বয়সে এসেও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছেন শিল্পী।
অরুণবাবুর বাড়িতে ঢুকলেই দেখা যাবে, চারিদিকে অসংখ্য ছবি। কিছু দেওয়ালে ঝোলানো, কিছু মাটিতেই রাখা। সেই সঙ্গে অসংখ্য কোলাজের কাজ। একটু খেয়াল করলেই বিশেষত্বটা নজরে আসবে। অরুণবাবু সমস্ত কোলাজই করেছেন ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে। কাগজ, প্লাস্টিক, ওষুধের ফয়েল, ক্যান ইত্যাদি জিনিস— যেগুলো ব্যবহারের পর আমরা ফেলে রাখি যত্রতত্র। সেগুলোকেই নতুন রূপ দিচ্ছেন অরুণবাবু। সেই জিনিসগুলোকে ব্যবহার করেই তৈরি করছেন একটার পর একটা অপূর্ব কোলাজ। তৈরি করছেন ছবি। মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে জিনিসগুলোর চেহারা।
কিন্তু ছবি থাকলেও, সেগুলো দর্শকদের সমাদর পাচ্ছে না। বিক্রি হচ্ছে না ছবি। সৃষ্টি তাই পড়ে আছে অবহেলার মধ্যে। অবহেলায় আছেন স্রষ্টাও। আজ, এই ৬৭ বছরের জীবনে প্রবল আর্থিক সংকটে পড়েছেন শিল্পী অরুণ মজুমদার। শিল্পী চাইছেন ছবি বিক্রি হোক। কিন্তু, সেই আকুতিই সার। কাগজে নাম বেরোলেও, সেসব আখেরে কোনও কিছুই করেনি। একটা সময় চরম অর্থাভাবের মুখে পড়েছিলেন ঋত্বিক ঘটক, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তিরা। দারিদ্র্য তাঁদের মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। অরুণবাবুর যাতে সেই পরিস্থিতি না হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব কি আমাদের নয়? তাহলে আমরা কিসের প্রগতিশীল?
ঋণ - Sristi n Kristi