সপ্তাহ দুয়েক আগের কথা। ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পশ্চিমের ওহায়ো (Ohio) প্রদেশে ঘটে গিয়েছিল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। লাইনচ্যুত হয়েছিল রাসায়নিক পণ্যবাহী রেলের ৫০টি বগি। ছড়িয়ে পড়েছিল ক্ষতিকারক ভিনাইল ক্লোরাইড। সেইসঙ্গে রেলের ইঞ্জিন-সহ একাধিক অংশে বিস্ফোরণের কারণে অগ্নিসংযোগ হয় বিষাক্ত এই রাসায়নিকে। খালি করা হয়েছিল ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের অঞ্চল। প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সে-অর্থে বড়ো মাত্রার প্রাণহানি না ঘটলেও, ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাস্তুতন্ত্র। প্রাণ হারিয়েছে ৪৫ হাজার বন্যপ্রাণী।
দুর্ঘটনার দু’সপ্তাহ পর এবার এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আনল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র(US)। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই সাড়া পড়ে গেছে গোটা দেশজুড়ে। সরব হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পরিবেশবিদরা। উঠছে তথ্য চাপা দেওয়ার অভিযোগও।
আসলে, এই বিতর্কের শুরু দুর্ঘটনার দিন কয়েক পর থেকেই। ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে এই দুর্ঘটনা ঘটলেও, প্রাথমিকভাবে খবরটি প্রকাশ্যে আনেনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। তবে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে এগোলে, এলাকা ফাঁকা করতে বাধ্য হয় মার্কিন সরকার। সে-সময় বহু পরিবেশবিদ সরব হলে, ওহায়ো প্রাকৃতিক ও প্রাণীজ সম্পদ বিভাগের তরফ থেকে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে জানানো হয়, ৩৫০০ প্রাণীর প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
তবে দু’সপ্তাহ পর প্রকাশিত আসল পরিসংখ্যান রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ ফেল গবেষকদের কপালে। ভিনাইল ক্লোরাইডের কারণে বর্তমানে প্রাণীমৃত্যুর সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজারে। অর্থাৎ, পূর্ব-অনুমানের প্রায় ১৩ গুণ। তাছাড়াও এই পরিসংখ্যান গৃহীত হয়েছে দুর্ঘটনাস্থলের ৫ মাইল ব্যাসার্ধের অঞ্চলের মধ্যে। ফলে, এই সংখ্যা যে আরও বাড়তে পারে, সেই আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের প্রকাশিত তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেও দাবি করেছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, ওহায়োতে বসবাস আমেরিকান বুল ফ্রগ, হোয়াইট টেল ডিয়ার, ববক্যাট, কায়োটি-সহ একাধিক বিরল বন্যপ্রাণীর। তবে এই দুর্ঘটনায় কোনো স্থলজ প্রাণীর মৃত্যু হয়নি বলে জানাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। বরং প্রাণ হারিয়েছে মূলত জলজ প্রাণীরা। যে তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রজাতির মাছ এবং কচ্ছপ। তাছাড়াও জলজ পরিবেশের বহু উপকারী অণুজীবও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনটাই অনুমান গবেষকদের। যার ফলে বদল আসতে পারে বাস্তুতন্ত্রের সমীকরণে, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা…
Powered by Froala Editor