করোনা অতিমারীর দ্বিতীয় তরঙ্গ এবার শহরের সীমানা ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমশ। আর গ্রামাঞ্চলে সচেতনতা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিষেবা, সবই বেহাল। তবে তার মধ্যেই এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করছে ওড়িশার করঞ্জর গ্রাম। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি, এখনও পর্যন্ত এই গ্রামের একজন সদস্যও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি।
ওড়িশার গঞ্জাম জেলার কালিকট ব্লকের মধ্যে অবস্থিত করঞ্জর গ্রাম। সব মিলিয়ে ২৬১টি পরিবারের বাস এই গ্রামে। আর মোট জনসংখ্যা ১২০০-র কিছু বেশি। তবে ২০২০ সালের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত গ্রামের কারোর শরীরেই কোভিডের কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ভারতে কোভিডের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মার্চ মাসের মধ্যে অতিমারী এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করতে হয়। এখনও অবধি সারা দেশে ২ কোটি ৬৮ লক্ষের বেশি মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। ওড়িশাতেই সংখ্যাটা প্রায় ৭ লক্ষের কাছাকাছি। সেখানে করঞ্জর গ্রামের এই উদাহরণ সত্যিই অবাক করে।
গ্রামবাসীদের কারোর মধ্যেই কোভিডের উপসর্গ দেখা না যাওয়ায় বেশ অবাক হয়েছেন চিকিৎসকরাও। এর মধ্যে একাধিকবার উপসর্গহীন কিছু মানুষের লালারসের নমুনাও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। জানুয়ারি মাসেই এভাবে ৩২ জনের আরটিপিসিআর পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু যথারীতি কারোর শরীরেই করোনা ভাইরাসের নমুনা পাওয়া যায়নি। এমনকি আশা প্রকল্প সহ অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের স্বাস্থ্যকর্মীরাও মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রত্যেকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খবর সংগ্রহ করে আনছেন। কিন্তু কিছুতেই আশঙ্কার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
গঞ্জাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, বিষয়টি অবাক করা হলেও অসম্ভব নয় কোনোভাবেই। জেলার মুখ্য কালেকটর বিজয় কুলাঙ্গে জানিয়েছেন, অতিমারীর শুরুর দিন থেকেই এই গ্রামের বাসিন্দারা যথেষ্ট সচেতন। এখনও অবধি শিশু থেকে বয়স্ক কেউই বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখেন না। আর সেক্ষেত্রেও মাস্ক ব্যবহার করা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে সচেতন সকলেই। এর জন্য বেশি প্রচারও করতে হয়নি। গ্রামবাসীদের কয়েকজন কর্মসূত্রে মুম্বাইতে ছিলেন। তাঁরাও ফিররে আসার সময় যথারীতি ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন কাটিয়েই গ্রামে প্রবেশ করেছেন। আর এই এক বছরের বেশি সময় ধরে করঞ্জর গ্রামে সমস্ত রকমের সামাজিক অনুষ্ঠানও একেবারেই বন্ধ।
আরও পড়ুন
প্যারোডিকে অস্ত্র করেই করোনা-যুদ্ধে সামিল ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক
উপযুক্ত সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে যে সত্যিই করোনা ভাইরাসকে রুখে দেওয়া যায়, সেটাই প্রমাণ করছেন করঞ্জর গ্রামের বাসিন্দারা। সারা দেশের মানুষ যদি এই সমস্ত নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে অতিমারী বেশিদিন কাবু করতে পারবে না।
আরও পড়ুন
গন্ধ শুঁকেই করোনা আক্রান্তদের শনাক্ত করতে পারে সারমেয়!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গঙ্গাতীরে গণকবর, দেশের করোনা-পরিস্থিতির প্রতিফলন উত্তরপ্রদেশে?