পথদুর্ঘটনায় আহত দুজন মানুষ পড়ে রয়েছেন রাস্তার ধারে। পথচলতি মানুষের সামনেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লেন তাঁরা। এমন দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। মর্মান্তিক এই দৃশ্য কিছুদিন তাড়া করেছে। তারপর ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু ওড়িশার পঙ্কজ কুমার তারাই (Pankaj Kumar Tarai) ভুলতে পারেননি সেই দৃশ্য। পেশায় ট্রাকচালক পঙ্কজ ২০০৫ সালে যাচ্ছিলেন হাইওয়ে দিয়ে। রাস্তায় আহত দুজনকে দেখে থমকে দাঁড়ান। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কিছু আগে অন্য একটি ট্রাক এসে বাইকারোহী দুজনকে ধাক্কা মেরেছে। তখনই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া গেলে হয়তো বেঁচে যেতেন তাঁরা। কিন্তু পঙ্কজকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি কেউ। ফলে তাঁর চোখের সামনেই দুজন মানুষের মৃত্যু হয়। আর এরপরেই তিনি ঠিক করেন, দুর্ঘটনায় আহতদের (Accident Victim) সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছানোর দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে।
২০০৫ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৩০০ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি। সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্স সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন নিয়মিত। তারপর যখনই কোথায় পথদুর্ঘটনার খবর পেয়েছেন, প্রথমেই অ্যাম্বুলেন্স সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। নিজেও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন দ্রুত। আহতদের পরিবারের সদস্যরা এসে পৌঁছানোর আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে চিকিৎসা। ক্রমশ গোটা পারাদ্বীপ জেলার মানুষ জেনে গিয়েছেন, পথদুর্ঘটনায় আহতদের সাহায্যের জন্য সবসময় পাওয়া যায় পঙ্কজকে। তবে ১৫ বছর আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা সহজ ছিল না। এখন অনেক বেশি দুর্ঘটনার খবর আসে। দুর্ঘটনার খবর এলেই অন্য সমস্ত কাজ বন্ধ করে সেখানে ছুটে যান পঙ্কজ।
এই ১৫ বছরে অন্তত ৪০০ মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন পঙ্কজ। তার মধ্যে ৩০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পেরেছেন। আর এই কাজের জন্য কখনও পারিশ্রমিক নেননি তিনি। এমনকি কখনও কখনও আহতের পরিবারের চিকিৎসার খরচ দেবার সামর্থ্য থাকে না। অথবা কারোর হয়তো পরিবারের কোনো সদস্যই নেই। এইসব ক্ষেত্রে পঙ্কজ নিজেই চিকিৎসার খরচ বহন করেন। মাসিক সঞ্চয়ের অনেকটাই খরচ হয়ে যায় এই কাজে। তবে এসব নিয়ে আক্ষেপ নেই তাঁর। বরং সমস্ত ক্ষেত্রে একা দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না সময়ের কারণেই। কখনও হয়তো একই সঙ্গে দুই জায়গা থেকে দুর্ঘটনার খবর আসছে। এইসব পরিস্থিতিতে দলগতভাবে কাজ না করলে উপায় নেই। পঙ্কজ তাই এখন নিজের উদ্যোগেই একটি এনজিও তৈরি করতে চান। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই কাজে এগিয়ে আসবে বলেও আশাবাদী তিনি।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নিরুত্তাপ প্রশাসন, নিজেই বাঁশের সেতু তৈরি করলেন ওড়িশার নৌচালক