ওড়িশার বারগড় জেলায় প্রত্যন্ত গ্রাম পুঝারিপালি। আজ কয়েক মাস হল সেখানে গাছগুলো রঙিন হয়ে উঠতে শুরু করেছে। না, ফুলের জন্য নয়। গাছে গাছে রঙিন তুলির ছোঁয়ায় ফুটে উঠছে ছোটদের স্কুলপাঠ্য বিষয়বস্তু। কোথাও সাধারণ বর্ণমালা, তো কোথাও অঙ্ক, বিজ্ঞান বা ভূগোলের বিষয়বস্তু। আর সেইসব গাছকে ঘিরেই প্রতিদিন জড়ো হচ্ছে নানা বয়সের ছেলেমেয়ে। এভাবেই চলছে পড়াশোনা। ক্লাসরুমের চারদেয়ালে বন্দি না থেকে এভাবেই প্রকৃতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে শিক্ষা।
অভিনব এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ইতিমধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছেন পুঝারিপালির শিক্ষক সুভাষচন্দ্র সাহু। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতোই বিরূপ প্রভাব পড়েছে ওড়িশার এই গ্রামেও। বন্ধ সমস্ত স্কুল। অনলাইনে পড়াশোনা করার মতো পরিকাঠামো নেই কারোরই। কিন্তু এই মহামারী পরিস্থিতিতেও ছোটোদের পড়াশোনা বন্ধ হতে দেবেন না বলেই ঠিক করেন সুভাষচন্দ্র সাহু। তাঁর কথায়, ছোটোরা তো যা দেখবে সেখান থেকেই শিখবে। তাই তাদের চোখের সামনেই ছড়িয়ে রাখতে হবে পাঠ্যবস্তু।
প্রথমে সুভাষবাবুর পরিকল্পনায় অবশ্য গ্রামবাসীরা হাসাহাসিই করেছিলেন। কিন্তু ক্রমশ তাতে সাফল্য মিলতে থাকায় এখন সবাই প্রশংসা করছেন। শুধু গাছের গায়েই পাঠ্যবস্তু এঁকে কাজ শেষ নয় অবশ্য, এরপর সেই গাছতলাতেই প্রতিদিন বসছে বিশেষ ক্লাস। সেখানে মাস্ক পরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে পড়াশোনা। সুভাষবাবু বারবার চেষ্টা করছেন, পড়াশোনা যতদূর সম্ভব ইন্টার্যাক্টিভ করা যায়। একপাক্ষিক পড়ানোর পদ্ধতিতে শেষ পর্যন্ত পড়ুয়ারা ক্লান্তই হয়ে পড়ে। পড়াশোনার শেষে সকলের ঘরে ঘরে ক্লাসের যাবতীয় নোটস পৌঁছে দেন তিনি। গত ৬ মাস ধরে এই একই কাজ করে চলেছেন। করোনা পরিস্থিতি শেষ হলেও কি তাঁর এই অভিনব ক্লাস শেষ হবে? উত্তরে অবশ্যই না বলবেন সুভাষবাবু। এ যে এক অভিনব পাঠশালা। করোনা পরিস্থিতিই এর প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়েছে।
Powered by Froala Editor