ওড়িশা পুলিশে নিয়োগ তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের, কী ভাবছে বাংলা?

“প্রতি বছর জুন মাসটাকে তো আমরা প্রাইড মান্থ হিসাবে পালন করে থাকি। প্রতি বছর র্যালি করে থাকি। কিন্তু এবছর তো করোনা পরিস্থিতিতে সেইরকম কোনো উদ্যোগই নেওয়া যায়নি। মনেই হচ্ছিল না এটা প্রাইড মান্থ। সেখানে হঠাৎ যখন অপ্রত্যাশিতভাবে এমন একটা খবর শুনলাম, তখন একটা অন্যরকম অনুভূতি হল। সত্যিই খুব আনন্দের খবর।” বলছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী তথা সমকামী ও রূপান্তরকামী অধিকারকর্মী জিয়া দাস। গত শনিবার ওড়িশা পুলিশ বিভাগ থেকে কনস্টেবল এবং সাব-ইনস্পেক্টর পদে প্রার্থী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আর তাতেই দেখা গিয়েছে, প্রথাগত পুরুষ এবং মহিলাদের পাশাপাশি এবার আবেদন জানাতে পারবেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও। সরকারিভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জায়গা করে দেওয়ার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন সমস্ত প্রান্তিক যৌনতার মানুষরাই।

সামাজিক সংগঠন ‘প্রান্তকথা’-র কর্মী অচিন্ত্য বলছিলেন, “স্টোনওয়েল রায়টের ইতিহাসকে মাথায় রেখে আমাদের যে এই প্রাইড মান্থের উদযাপন, তা তো আসলে আমাদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তির লড়াই। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত সত্যিই প্রশংসনীয়।” তবে পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, কেন এখনও অবধি কিছু কিছু ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ এই অধিকার? সমকামী ও রূপান্তরকামী অধিকারকর্মী তথা অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রান্সজেন্ডার হিজরা অফ ওয়েস্টবেঙ্গলের কর্ণধার রঞ্জিতা সিনহা বললেন, “আমরা একসময় বলতাম বাংলা আজ যা ভাবে, ভারতবর্ষ কাল তাই ভাবে। এমনকি লিঙ্গসাম্য আন্দোলনের একটা বড়ো অধ্যায় শুরু হয়েছিল বাংলা থেকেই। অথচ কিছুদিন আগে বিহার পুলিশ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সামিল করেছেন, এখন ওড়িশা পুলিশ সেই পথ নিল। কিন্তু সার্বিক সমস্যার সমাধানের জন্য একটা কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা থাকা খুব জরুরি।” জিয়ার কথাতেও উঠে এল একই সুর। তিনি বললেন, “কিছুদিন আগেই তো পশ্চিমবঙ্গ পুলিশেরও নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছিল। কিন্তু সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের আবেদন জানানোর কোনো অধিকার ছিল না। অথচ ২০১৪ সালের সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক নালসা রায়ের পর তো এমনটা হওয়ার কথা নয়।”

ওড়িশা পুলিশ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে সমাজের মানসিকতায় বদল আনতে এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মনোবল বাড়াতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এমন উদ্যোগের সামাজিক তাৎপর্য অনেক বেশি গভীর। অচিন্ত্য বলছিলেন, “তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা সামাজিকভাবে যে যে পরিসরে নিগ্রহের শিকার হন, প্রশাসন তার মধ্যে একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিসর। সেখানে যদি আমাদের প্রতিনিধিত্ব থাকে, তাহলে পুরো বিষয়টা অনেক বেশি মানবিক হয়ে উঠবে বলেই আশা করা যায়। তাছাড়া অন্যান্য সামাজিক পরিসরে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইটাও অনেকটা সহজ হবে।” প্রাইড মান্থের বিশেষ মুহূর্তে এমন একটা ঘোষণা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু পাশাপাশি প্রশ্ন তো থেকেই যায়, সমস্ত ক্ষেত্রে প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের সমান অধিকার পেতে  আর কতদিন লাগবে? নিজের পরিচয় নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার লড়াইটা আর কতদিন চলবে?

Powered by Froala Editor