ওড়িশার (Odisha) কান্ধমাল জেলার পাহাড়ঘেরা গ্রাম বন্দোপঙ্কা (Bandopanka)। পৌঁছাতে গেলেও রীতিমতো ট্রেকিং করতে হয়। এখনও কোনো পাকা রাস্তা তৈরি হয়নি বন্দোপঙ্কায়। আসেনি বিদ্যুৎও। গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলাপ্রধানের কাছে একাধিকবার আবেদন করেও সুরাহা হয়নি কোনো। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? প্রশাসনিক উদাসীনতায় ভরসা হারিয়ে এবার একক উদ্যোগেই পাকা রাস্তা তৈরি করে ফেললেন গ্রামেরই এক বাসিন্দা ধনেশ্বর প্রধান (Dhaneshwar Pradhan)।
দারিংবাড়ি ব্লকের কেরুবাড়ির নিকটবর্তী এই গ্রাম থেকে যান চলাচলকারী রাস্তার দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। ফলে, দৈনন্দিন সমস্যার পাশাপাশি কোনো গ্রামবাসী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াও বেশ কঠিন। সরকারের দ্বারস্থ হয়ে কোনো লাভ না হওয়ায়, বছর কয়েক আগে সমস্যা সমাধানে গ্রামবাসীদের কাছেই আবেদন করেন ধনেশ্বর। কিন্তু দিনমজুরি করে যাঁদের সংসার চলে, তাঁদের সামর্থ্যই বা কতটুকু? ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে অর্থসাহায্য দিতে তাই এগিয়ে আসেননি কেউ। শেষ পর্যন্ত নিজেই মাঠে নামেন ৪২ বছর বয়সী ধনেশ্বর। কুড়ুল, শাবল নিয়ে শুরু হয় জঙ্গল ও পাথর কেটে রাস্তা নির্মাণের কাজ।
তবে ধনেশ্বর একা নন, এই লড়াইয়ে সামিল ছিল তাঁর গোটা পরিবারই। ধনেশ্বরের সঙ্গে হাত লাগিয়ে একযোগে কাজ করেছেন তাঁর স্ত্রী এবং চার সন্তান। অথচ, তিনি যে রাস্তা তৈরির এমন একটি একক প্রকল্প নিয়েছেন, সে ব্যাপারে জানা ছিল না গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দাদেরও।
সম্প্রতি, ওড়িশার এই জঙ্গলে গাছের সংখ্যার জরিপ করতে হাজির হয়েছিলেন দারিংবাড়ির দুই সমাজকর্মী— লুসমিন প্রধান এবং রূপকান্ত প্রধান। প্রথম তাঁদেরই নজরে আসে বিষয়টি। তাঁরাই প্রকাশ্যে আনেন ধনেশ্বরের এই একক প্রকল্পের কথা। বিগত এক মাসের প্রচেষ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা প্রস্তুত করে ফেলেছেন ধনেশ্বর। আর কিলোমিটার দুয়েক রাস্তা তৈরি করলেই, তা সংযুক্ত হবে দারিংবাড়ির মূল রাস্তার সঙ্গে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে নড়েচড়ে বসেছে দারিংবাড়ি প্রশাসনও। তবে সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকতে নারাজ ধনেশ্বর। বাকি পথটুকুও নিজে হাতে তৈরি করতে বদ্ধপরিকর তিনি। ধনেশ্বরের এই উদ্যোগ যেন উস্কে দিচ্ছে বিহারের মাউন্টেন ম্যান দশরথ মাঝির স্মৃতি…
আরও পড়ুন
গ্রামের দুর্গমতা ঘোচাতে একাই রাস্তা বানিয়ে ফেললেন ওড়িশার ধনেশ্বর
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
জাতীয় হকি দলের 'দায়িত্বে' ওড়িশা সরকার, জার্সিতেও উজ্জ্বল নাম