ওড়িশার এক প্রত্যন্ত গ্রামে এখনও যেন মধ্যযুগের অন্ধকার গোঁড়ামি আর ধর্মান্ধতা ঘিরে আছে। অন্তত সাম্প্রতিক ঘটনায় সেরকম ছবিই উঠে এসেছে। যেখানে দলিত পরিবারের এক বালিকা উঁচু জাতের এক ব্যক্তির বাগানের ফুলে হাত দিয়েছে বলে ৪০টি দলিত পরিবারকে বয়কটের মুখে পড়তে হয়েছে। আর এই পরিস্থিতি চলেছে টানা ১৫ দিন। অবশেষে স্থানীয় থানার ইন্সপেক্টর এ. কে ডুংডুং-এর হস্তক্ষেপে দুপক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া সম্ভব হয়।
গ্রামের ৭০০টি পরিবারের মধ্যে ৪০টি তফশিলি জাতি নায়েক পরিবার। তেমনই একটি পরিবারের এক বালিকা স্থানীয় এক উঁচু জাতের ব্যক্তির বাগানের ফুল তুললে সমস্যার সূত্রপাত। এরপর মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষমাও চাওয়া হয়, কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হননি ধর্মান্ধ মানুষরা। শেষ পর্যন্ত ৪০টি পরিবারকেই বয়কট করে রাখা হয়। এমনকি তাঁদের রেশন, চিকিৎসা পরিষেবা অথবা স্কুলের পঠনপাঠন থেকেও বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরকম পরিস্থিতিতে দলিত পরিবারগুলির তরুণ সদস্যরা একসঙ্গে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়। তারপরেই ইন্সপেক্টর, ডেপুটি কালেকটর এবং অন্যান্য সরকারি অফিসারদের মধ্যস্থতায় উচ্চ জাতের মানুষরা নিজেদের ভুল স্বীকার করেন। তাঁরা ভবিষ্যতে আর এরকম বৈষম্যমূলক আচরণ করবেন না, এই শর্তে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকে প্রশাসন। যদিও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, কেবলমাত্র দলিত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বন্ধ করার কথাই বলা হয়েছিল। বাকিটা অপপ্রচার।
এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এখনও আমাদের দেশে কুসংস্কার আর ভেদাভেদ এমন প্রকট হয়ে উঠতে পারে, ভাবতে সত্যিই অবাক লাগে। কিন্তু একের পর এক ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় জ্বলন্ত বাস্তবতা। বছর চারেক আগে হায়াদ্রাবাদে দলিত গবেষক রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও এখনও বিভেদকামী মানসিকতা কতটা প্রকট। সেখানে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যে আজও এমন ঘটনা ঘটে চলেছে, তাতে আশ্চর্যের সত্যিই কিছু আছে কি?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
জাতীয় ট্রান্সজেন্ডার পরিষদে নেই বাংলার প্রতিনিধি, উঠছে রাজনৈতিক বৈষম্যের অভিযোগ