শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র উপায় ছিল নৌপথ। কিন্তু গ্রামের প্রায় হাজার তিরিশের মানুষের জন্য এতদিন পর্যন্ত ব্যবস্থা ছিল কেবলমাত্র একটি নৌকোর। ফলে যাত্রীদের চরম হেনস্থার সম্মুখীন হতে হত, তা নতুন করে বলার নেই কিছুই। এবার এই সমস্যার সমাধান করতেই অভিনব পদক্ষেপ নিলেন ওড়িশার (Odisha) নৌচালক, জয়দেব ভাটরা। নিজের জমি বন্ধক রেখেই একক উদ্যোগে তৈরি করে ফেললেন আস্ত একটি বাঁশের সেতু (Bamboo Bridge)।
সম্প্রতি এমনই ঘটনা ঘটল ওড়িশার কোরাপুট জেলার প্রান্তিক গ্রাম বাসুলিতে। গ্রামের মধ্যে দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে ইন্দ্রাবতী নদী। সেই নদী পেরলে তবেই পৌঁছানো যায় শহরে কিংবা পার্শ্ববর্তী গ্রামে। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে গ্রামবাসীদের নৌপারাপারের দায়িত্ব সামলেছেন ৫৫ বছর বয়সী জয়দেব। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে যাত্রীর সংখ্যা। ফলে, তাঁর একার পক্ষেও যে সম্ভব নয় সকলকে সময় মতো পৌঁছে দেওয়া গন্তব্যে। আর সেখান থেকেই এমন অভিনব সিদ্ধান্ত জয়দেবের।
অবশ্য, সেতুনির্মাণের জন্য সরকারের কাছে বিগত এক দশক ধরেই একাধিকবার আবেদন জানিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। ২০১৬ সালে খোদ মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও ১৬ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন বাসুলির জন্য। জানিয়েছিলেন, নির্মিত হবে পাকা সেতু। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে আসার পরেও সেই কাজ ফেঁসে আছে লাল সুতোর ফাঁসে। এখনও পর্যন্ত নির্মিত হয়নি একটি স্তম্ভও।
সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তায় বিরক্ত হয়েই বছর তিনেক আগে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন জয়দেব। বন্ধক রাখেন নিজের আখের ক্ষেত। সেই টাকা দিয়েই গড়ে তোলেন ১০০ মিটার দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো। নির্মাতা তিনি নিজেই। সেইসঙ্গে কিছু গ্রামবাসী এবং তাঁর ছেলে বনমালীও তাঁকে সাহায্য করেছে এই সাঁকো তৈরিতে। টানা তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর সম্প্রতি বাস্তবতার রূপ পেয়েছে তাঁর এই স্বপ্নের ‘নির্মাণ’। উপকৃত, হাজার হাজার গ্রামবাসী। পারাপার করতে আগের তুলনায় সময়ও লাগছে অনেক কম।
গ্রামবাসীদের জন্য আস্ত পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করেছিলেন বিহারের মাউন্টেন ম্যান দশরথ মাঝি। এবার আস্ত সেতু তৈরি করে সেই কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দিলেন ওড়িশার প্রত্যন্ত গ্রামের নৌচালক। তাঁর এই উদ্যোগের জন্য কোনোরকম প্রশংসাই যেন যথেষ্ট নয়…
Powered by Froala Editor