গ্রামে আধুনিক চিকিৎসার প্রসার ঘটিয়ে ফোর্বস ইন্ডিয়ার তালিকায় ওড়িশার মহিলা

আজ থেকে বছর দশেক আগেও ওড়িশার সুন্দরগড় জেলার মানুষ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ভাবতে পারতেন না। সাধারণ জ্বর থেকে শুরু করে মারণরোগ, সবকিছুর জন্যই ওঝার দ্বারস্থ হতেন তাঁরা। ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আজও যেভাবে অপবিজ্ঞানের চর্চা চলে, সুন্দরগড় ছিল তারই জ্বলন্ত পীঠস্থান। তবে আজ পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। আর এই প্রায় একাই এই বদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন মাতিলদা কুল্লু (Matilda Kullu)। দরিদ্র আদিবাসী পরিবারে জন্ম মাতিলদার। রোজগারের আশায় যোগ দিয়েছিলেন আশা প্রকল্পে। কিন্তু সেই কাজকেই ক্রমশ ভালোবেসে ফেলেছেন তিনি। আর তাই হাজার প্রতিকূলতা পেরিয়েও তিনি গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্যবিধির প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন। এই লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসাবেই ফোর্বস ইন্ডিয়ার (Forbes India) ডব্লিউ-পাওয়ার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

৪৫ বছরের মাতিলদা আশা প্রকল্পে যোগ দিয়েছিলেন রোজগারের উদ্দেশ্যেই। কিন্তু কাজটা সহজ ছিল না। গ্রামের প্রায় নিরক্ষর মানুষদের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা বোঝানো কঠিন। তার চেয়েও কঠিন ছিল তাঁর জাতিগত পরিচয়কে পেরিয়ে আসা। তফসিলি উপজাতির সদস্য মাতিলদার জন্য অনেক বাড়ির দরজাই বন্ধ ছিল। তবু লড়াই ছাড়েননি তিনি। যখন যেভাবে সুযোগ পেয়েছেন, তাকেই কাজে লাগিয়েছেন। লড়েছেন জাতিবিদ্বেষী মানসিকতার সঙ্গে। ধীরে ধীরে সেখানেও বদল এসেছে। এখনও বেশ কিছু বয়স্ক মানুষ তাঁকে অস্পৃশ্য মনে করেন। তবে তাতে তাঁর কাজের খুব একটা অসুবিধা হয় না। কারণ তরুণ প্রজন্মের প্রায় কেউই আর অস্পৃশ্যতার রীতি মানেন না।

তবে মাতিলদার কাছে সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচার করা। গ্রামে কালাজাদু এবং অপবিজ্ঞানের চর্চাকে ঘিরে রীতিমতো ব্যবসায়িক কাঠামো গড়ে উঠেছিল। সেই ব্যবসায় আঘাত লাগায় অনেকেই বিপক্ষে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু সমস্ত বাধাকে তুচ্ছ করে বারবার মরণাপন্ন মানুষদের কাছে ছুটে গিয়েছেন তিনি। প্রসূতিদের পুষ্টিকর খাবার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র, সবকিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি। এমনকি কঠিন পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের সিজারিয়ান ডেলিভারিতে রাজি করিয়েছেন। আর এসবের মধ্যেই এসে পড়েছে করোনা অতিমারী। বহু বিরূপ প্রচারের মধ্যেও করোনাবিধির প্রচার করে গিয়েছেন তিনি। এমনকি তাঁর এলাকার বেশিরভাগ মানুষকে টিকা নিতেও রাজি করিয়েছেন তিনি। অনেকের ইতিমধ্যে দুটি টিকাই নেওয়া হয়ে গিয়েছে।

দীর্ঘ লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসাবে এবার ফোর্বস ইন্ডিয়ার সাহসী নারীদের তালিকায় জায়গা পেয়েছেন তিনি। তবে এই মাতিলদাকেও কয়েকদিন আগেই দেখা গিয়েছিল বকেয়া মজুরির জন্য প্রতিবাদে নামতে। করোনা পরিস্থিতিতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তাঁর মতো অসংখ্য আশাকর্মী। অথচ ওড়িশার ৪৭ হাজার আশাকর্মী বিগত ২ বছর ধরে তাঁদের বরাদ্দ মাসহারার টাকাটুকুও পাননি। বাড়তি কোভিড সুরক্ষার ব্যবস্থা তো বাহুল্য। মাতিলদার মতো অনেক কর্মীই এর মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন আবারও। তাঁদের এই লড়াইকে সম্মান জানানো অবশ্যই জরুরি। কিন্তু ২ বছর ধরে মাসহারা না পাওয়া কর্মীরা কি আদৌ খুশি হবেন তাতে?

আরও পড়ুন
শপথ নেওয়ার অব্যবহিত পরেই পদত্যাগ সুইডেনের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রীর

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
মারণ এইডস থেকে মুক্তি, আশা জাগাচ্ছেন আর্জেন্টাইন মহিলা

Latest News See More