মৃত্যুশয্যায় প্রতিটা মানুষেরই শেষ চাহিদা থাকে একটু ভালোবাসার স্পর্শ। কিন্তু করোনা অতিমারী যেন মানুষের সেই অতি প্রয়োজনীয় চাহিদাটাই কেড়ে নিয়েছে একেবারে। ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলেই যে ছড়িয়ে যাবে সংক্রমণ। তবে এর মধ্যেই কিছু কিছু মানবিক দৃশ্য সবাইকে অবাক করে দেয়। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে ভাইরাল হয়ে উঠেছে তেমনই এক ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক মুমুর্ষু রোগীর হাতের উপরে রাখা আরও দুটি হাত। তবে এগুলি ঠিক মানুষের হাত নয়। আসলে দুটি জলভর্তি সার্জিক্যাল গ্লাভস। ঠিক এইভাবেই মৃত্যুশয্যায় মানুষকে স্পর্শের অনুভূতি দিতে চাইছেন কোনো নার্স।
জানা গিয়েছে ব্রাজিলের রাজধানী সাও পাওলো শহরের ভিলা প্রেদো হাসপাতালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ড থেকে ছড়িয়ে পড়েছে ছবিটি। একজন রোগীর ক্ষেত্রে শুধু নয়, বেশ কয়েকজন মুমুর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি নিয়েছেন নার্সরা। তাঁদের কথায়, সেবিকার কাজে তো শুধু কর্মনিষ্ঠ হলে হয় না। তার সঙ্গে প্রয়োজন মানবিকতা। রোগীর যন্ত্রণাকে বুঝতে না পারলে তার উপশমও সম্ভব নয়। ভিলা পেদ্রো হাসপাতালের নার্সদের এই মানবিক অনুভূতি এখন সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো চর্চার বিষয়।
বেশ কিছুদিন ধরেই নার্সরা লক্ষ করছিলেন নিজেদের শেষ সময় আশঙ্কা করে রোগীরা হাতরে খুঁজছেন তাঁদের প্রিয়জনদের। কিন্তু করোনা সতর্কতার মধ্যে কাউকেই দেখা করতে দেওয়া সম্ভব নয়। নার্সরা কিছুক্ষণ সঙ্গ দিলেও সেই সময়টা যথেষ্ট নয়। তাই অন্য পথ খুঁজতে গিয়েই এই পদ্ধতি রীতিমতো আবিষ্কার করলেন নার্সরা। দুটি জলভর্তি সার্জিক্যাল গ্লাভস বেঁধে দিলেন রোগীর হাতের দুপাশে। এর পর অনেকেরই অনুভূতি ক্ষমতা বেড়েছে বলেও জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘদিন ধরেই করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য ব্রাজিলের নাম উঠে এসেছে বারবার। এমনকি খোদ প্রেসিডেন্ট বলসেনারোও সেদেশে লকডাউনের বিরোধিতা করেছেন। করোনা অতিমারী মানুষের জন্য তেমন ভয়ঙ্কর নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু এসবের মধ্যেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে তার নিজের গতিতে। কাতারে কাতারে রোগী আশ্রয় নিচ্ছেন হাসপাতালে। তবে সেখানে যে রোগীরা একেবারে অসহায় নন, বরং তাঁদের সমস্ত প্রয়োজন অনুভব করার জন্য সতর্ক হয়ে আছেন চিকিৎসক এবং নার্সরা, এই ছবি যেন সে-কথাই প্রমাণ করে।
আরও পড়ুন
করোনাবিধি না-মানায় শাস্তি, নিজের প্রশাসনকেই জরিমানা দিলেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
টিকা নিলেই নিশ্চিন্ত নয়, আবারও ঘটতে পারে করোনা সংক্রমণ