একদিন সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে শুনলেন আপনি বিদেশি হয়ে গেছেন। রাতারাতি। এদিকে গত তিন-চার প্রজন্ম ধরে এই দেশটাকেই নিজের বলে ভেবে এসেছেন। ঘোর কাটতে না কাটতেই শুনলেন, আপনার পরিবারে আপনি আর আপনার ভাই বিদেশি। কিন্তু আপনার স্ত্রী, সন্তান, অন্যান্য আত্মীয়রা বিদেশি নন!
বর্তমানে আসামের পরিস্থিতি অনেকটা এইরকমই। গত ৩১ আগস্ট, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। এতদিন ভারতকে নিজের দেশ হিসেবে জেনে এসেছেন তাঁরা। অনেকে সেনাবাহিনীতেও কাজ করেছেন। আজ তাঁরা ‘ভিনদেশি’। শুধু তাই নয়, একই পরিবারে মেয়ের নাম এনআরসি তালিকায় উঠেছে, বাবা নেই। স্বামীর নাম আছে, স্ত্রী-র নেই। সেই পরিবারগুলোর এখন কী হবে? সরকার চুপ! এই ১৯ লক্ষ মানুষের ভবিষ্যৎ কী? সরকার চুপ!
এতদিন যে সার্টিফিকেট সমস্ত জায়গায় দেখিয়ে এসেছিলেন মালতি বালা ঘোষ, আজ জানতে পারলেন সেটি নাকি ‘ভুয়ো’। পঞ্চায়েত সার্টিফিকেট এবং জন্মের শংসাপত্র নিয়ে তাঁকে বারংবার প্রমাণ দিতে হচ্ছে যে বাবার নামের পাশে যে নামটি আছে, তিনিই তাঁর ‘প্রকৃত’ পিতা। তারপর, দিনের শেষে সেইসব ‘ভুয়ো’ সার্টিফিকেট নিয়ে ঘরে ফিরে আসছেন। শুধু মালতি বালা ঘোষ নন, বিগত বহু মাস ধরে এটাই আসামবাসীর দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মামলা করার মতো টাকাও নেই সবার। বাধ্য হয়েই আত্মহত্যাকে একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কেউ কেউ।