ভারতের বুকে ম্যাক-লিওডগঞ্জ যেন একখণ্ড তিব্বত। আর সেই শহরের বুকে ছোট্ট একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান। নাম, নওরোজি অ্যান্ড সন্স। নীল রঙের সাইন-বোর্ডের উপর লেখা প্রতিষ্ঠার সাল - ১৮৬০। সেই সিপাহী বিদ্রোহের বছর তিনেক পরের কথা। তারপর ইতিহাসে কত অধ্যায় একে একে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু ১৬০ বছর ধরে টিকে থেকেছে হিমাচল প্রদেশের নওরোজি অ্যান্ড সন্স। এবার এসেছে তারও বিদায় নেওয়ার সময়। ইতিহাসের ধারায় আরও আকটি অধ্যায় শেষের মুখে।
১৮৬০ সালে পার্সি পরিবারের হাতে যে দোকানের গোড়াপত্তন, সেটাই যে একদিন ম্যাক-লিওডগঞ্জ শহরের সমার্থক হয়ে দাঁড়াবে সেটা হয়তো তখন বোঝা যায়নি। তবে ক্রমশ মানুষের ভালোবাসা দোকানকে বাড়িয়ে তুলেছে। যেকোনো প্রয়োজনে ছুটেছে নওরোজি অ্যান্ড সন্সে। সেটা প্রতিদিনের মুদিখানার জিনিস হোক বা বেকারি অথবা তামাক, টয়লেটারি কিম্বা মাদক দ্রব্য। সমস্তকিছুর নিশ্চিত ভরসাযোগ্য ঠিকানা এই একটি দোকান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারলেন না নওরোজি পরিবার। বর্তমান মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ম্যাক-লিওডগঞ্জের সমস্ত সম্পত্তিই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এরপর দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হওয়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা। আগামী মাসেই হয়তো আর তাকে দেখা যাবে না।
১৬০ বছরের ইতিহাসে ম্যাক-লিওডগঞ্জের সঙ্গে নওরোজি পরিবারের এক আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বিশেষ করে নওজার নওরোজির কথা তো বলতেই হয়। দলাই লামার সঙ্গেও তাঁর এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আর সেই সম্পর্কও এই দোকানকে কেন্দ্র করেই। লামার বাড়ি থেকে দোকানের দূরত্ব বড়জোর ১ কিলোমিটার। শহরের সধারণ মানুষের কাছেও দোকানটি যেন একান্ত নিজস্ব। তাই এই দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা শুনে স্বজন হারানোর কষ্ট পাচ্ছেন সকলেই।
নওজার নওরোজির বড় ছেলে কুরুশ এখন উত্তরবঙ্গে চা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পারভেজ নওরোজিরও সময় নেই দোকানের তদারকি করার। আর তাই শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই দোকান বিক্রির সিদ্ধান্ত। তবু কি কোনোভাবে বাঁচিয়ে রাখা যেত ঐতিহ্য বিজরিত এই দোকানকে? অন্য কারোর হাতে মালিকানা দিয়েও কি বাঁচিয়ে রাখা যেত না ইতিহাস?
Powered by Froala Editor