মাত্র কয়েকদিন আগেই চলে গেল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর এবছর ইউনেস্কোর থিম ছিল ভাষা সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। বিশেষ করে ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহার ভাষা গণতন্ত্রের অন্যতম মঞ্চ হয়ে উঠতে চলেছে বলে আশা প্রকাশ করেছে ইউনেস্কো (UNESCO)। আর এই বিষয়ে এবার নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন কানাডার (Canada) মিয়ালি কোলে-সুলোভেনিক। উত্তরমেরু অঞ্চলের বাসিন্দা, অর্থাৎ যাঁদের আমরা এস্কিমো (Inuit) বলে চিনি, তাঁদের মাতৃভাষা ইনিয়াতকে বাঁচিয়ে রাখতে ইন্টারনেটকেই বেছে নিয়েছেন তিনি।
বিগত ১০ বছর ধরে ইনিয়াত ভাষা শিক্ষা দিয়ে চলেছেন মিয়ালি। কানাডা, আলাস্কা এবং গ্রিনল্যান্ডের প্রাচীন ভাষা ইনিয়াত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন সেই ভাষা হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে কানাডায় প্রায় ৬৫ হাজার এস্কিমোর বাস। তবে তার মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার মানুষই নিজেদের মাতৃভাষা ভুলে গিয়েছেন। কারণ স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ইনিয়াত শিক্ষার সুযোগ নেই। তাছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইংরেজিভাষী মানুষ ইনিয়াত ভাষাকে বেশ হীন চোখেই দেখেন। এইসব কারণেই এস্কিমোরাও আর প্রকাশ্যে নিজেদের ভাষায় কথা বলতে চান না।
তবে ভাষা তো শুধুই যোগাযোগের মাধ্যম নয়, ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সংস্কৃতিও। ইনিয়াত ভাষার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে এস্কিমোদের সংস্কৃতিও। ক্ষয়িষ্ণু সেই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখাকেই কর্তব্য মনে করেছেন মিয়ালি। নিজে ইংরেজি মাধ্যম আবাসিক স্কুলের ছাত্রী হলেও তিনি নিজের মাতৃভাষাকে ভুলে যেতে পারেননি। এমনকি মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য কখনও হীনমন্যতাতেও ভোগেননি। তাঁর এই আত্মবিশ্বাস বাকিদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে ১০ বছর আগে ইনিয়াত ভাষার শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে ইনিয়াত ভাষা শিখিয়েছেন তিনি। এবার সেই পরিসরকেও আরও বাড়িয়ে তুলতে চলেছেন তিনি।
ইনিয়াত ভাষা শিক্ষার জন্য তৈরি করে ফেলেছেন একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। নাম রেখেছেন ‘আলুরভিক’। ইনিয়াত ভাষার এই শব্দের অর্থ যেখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কানাডা তো বটেই, পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকেই মানুষ এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ইনিয়াত ভাষা শিখতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এখান থেকে সংগ্রহ করা যাবে এস্কিমোদের তৈরি নানা হস্তশিল্পও। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে এই উদ্যোগ আগামীদিনে সফল হবে বলেই আশাবাদী মিয়ালি।
আরও পড়ুন
ভাষাদিবসের প্রাক্কালেই মৃত্যু আরও একটি প্রাচীন জনগোষ্ঠী ভাষার
Powered by Froala Editor