আরবি বা উর্দু নয়, কন্নড় ভাষায় আজান শুনে ঘুম ভাঙে কর্নাটকের এই গ্রামের

কর্নাটকের এই গ্রামে হিন্দু-মুসলমান সকলেরই ঘুম ভাঙে ভোরের আজানে। তারপর দরগায় শুরু হয় প্রার্থনা। তবে এই আজান আর প্রার্থনা একটু আলাদা। কারণ আরবি তো নয়ই, উর্দু ভাষাতেও হয় না প্রার্থনা। বরং মসজিদের সমস্ত কাজই হয় কন্নড় (Kannada Language) ভাষায়। কর্ণাটকের (Karnataka) স্থানীয় ভাষায়। এমনই আশ্চর্য দৃশ্য দেখা যায় হাভেরি গ্রামে। আজ নতুন নয়, বিগত ১৫০ বছর ধরে এই নিয়মই চলে আসছে হজরত মেহবুব সুবানি দরগায়।

হাভেরি গ্রামে সব মিলিয়ে ৪০০ জন মুসলমানের বাস। তাঁদের মধ্যে অনেকেই কোনোদিন স্কুলে যাননি। আরবি তো দূরের কথা, উর্দু ভাষাতেও সামান্য জ্ঞান নেই তাঁদের। তবে কন্নড় ভাষা সকলেই বোঝেন। আর তাই প্রথম থেকেই আঞ্চলিক ভাষায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে এই মসজিদে। এখন অবশ্য গ্রামে একটি মাদ্রাসা তৈরি হয়েছে। সেখানে উর্দু এবং আরবি শিক্ষার ব্যবস্থাও আছে। তবু কন্নড় তাঁদের মাতৃভাষা। যে প্রার্থনার অর্থ বোঝা যায় না, সেই প্রার্থনার কোনো মূল্যও নেই – এমনটাই মনে করেন বর্তমান মৌলভি মহম্মদ পীরানসাব। এর আগের দুই মৌলভিও কন্নড় ভাষায় ইসলামের শিক্ষাদান করেছেন। তাঁদের দেখাদেখি তিনিও তাই করেন।


মসজিদে কন্নড় ভাষায় প্রার্থনার আয়োজন করার ফলে গ্রামে সাম্প্রদায়িক ঐক্যের পরিবেশও অনেকটা দৃঢ় হয়েছে। গ্রামের হিন্দু অধিবাসীরা অনেকেই মসজিদে প্রার্থনার সময় সেই কথাগুলি শোনার চেষ্টা করেছেন। আর দেখেছেন, প্রার্থনার ভাষায় দুই ধর্মের কত মিল। আসলে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতেও মানুষের মূল চরিত্র তো একই থেকে যায়। এই বিষয়টাই আরও স্পষ্টভাবে বুঝেছেন সকলে। অবশ্য হজরত মেহবুব সুবানি দরগা তৈরিও হয়েছিল এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ থেকেই। সে আজ থেকে ৩ প্রজন্ম আগের কথা। এক হিন্দু পরিবারের দান করা জমিতেই তৈরি হয়েছিল দরগাটি। গত ১৫০ বছরে দেশে সাম্প্রদায়িক পরিবেশের নানা পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছে। তবু হাভেরি গ্রামের পরিবেশ বদলায়নি একটুও। বদলায়নি দরগায় প্রার্থনার ভাষাও।

আরও পড়ুন
মন্দির বাঁচাতে এগিয়ে এলেন মুসলিমরাই, সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত দিল্লিতে

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ মালারকোট, পেল পৃথক জেলার স্বীকৃতিও