একসময় আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলের সাভানা তৃণভূমি অঞ্চলে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ছিল সাদা রঙের গণ্ডার। পোশাকি নাম নর্থার্ন হোয়াইট রাইনো। ইউরোপের বহু বাড়িতে আজও দেখতে পাওয়া যায় এই গণ্ডারের চামড়া দিয়ে তৈরি ফার্নিচার। আর কয়েক বছর পর হয়তো সেটুকুই থেকে যাবে। বাস্তবে একটিও সাদা চামড়ার গণ্ডারের অস্তিত্ব থাকবে না। কারণ বর্তমানে আর কেবল দুটি প্রাণী অবশিষ্ট আছে। আর তারা দুজনেই স্ত্রী গণ্ডার। ফলে বংশবিস্তারের প্রায় কোনো সম্ভাবনাই নেই।
কয়েক বছর আগেও কিন্তু পরিস্থিতি এতটা কঠিন ছিল না। মাত্র ২০ বছর আগেও কেনিয়ার ওল পেজেতা সংরক্ষিত অরণ্যে ৭টি সাদা গণ্ডারের অস্তিত্ব ছিল বলে জানাচ্ছেন সেখানকার পরিদর্শকরা। কিন্তু তখন বহু অনুরোধ সত্ত্বেও সরকারিভাবে সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। আর তার সঙ্গে চোরাশিকারীদের উপদ্রব তো লেগেই ছিল। বাকি ৫টি গণ্ডারকেই মেরে ফেলেছে চোরাশিকারীরা। এমনকি কেনিয়া বনবিভাগের বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি কে-৯ প্রতিরক্ষা বাহিনীও তাদের বাঁচাতে পারেনি। এখন প্রায় সমস্ত সম্ভাবনাই মুছে গিয়েছে।
তবে এখনও হাল ছেড়ে দিতে রাজি নন বিজ্ঞানীরা। শুধু সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন ছিল কিছুটা অর্থসাহায্য। বহু তদ্বিরের পর অবশেষে গতবছরের পরিবেশ সম্মেলনে হোয়াইট রাইনো সংরক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে ইউরোপের কিছু দেশ। আর সেই অর্থের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে ‘বায়ো-রেসকিউ’ প্রকল্প। কিন্তু তার পরেও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, যেহেতু আর কোনো পুরুষ সদস্যই বেঁচে নেই, তাই বংশবিস্তার ঘটানোর একমাত্র উপায় বায়ো-স্টেম। ডিম্বানুর কৃত্রিম নিষেক ঘটিয়ে ভ্রূণ তৈরি করার এই প্রক্রিয়াতেও সাফল্যের হার খুবই কম।
তাছাড়া আরও বেশ কিছু বাস্তব সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন বার্লিনের প্রাণী বিশেষজ্ঞ ডঃ হিলডারব্র্যান্ড। তিনি নিজে আফ্রিকায় গিয়ে পরীক্ষা করেছেন। দেখেছেন, ২০ বছরের তরুণী গণ্ডার ফাতুর পক্ষে স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ সম্ভব নয়। অন্যদিকে তার মা নাজিনের জরায়ুতে বাসা বেঁধেছে টিউমার। সেই টিউমার অপারেশন করা গেলেও ইতিমধ্যে নাজিনের পিছনের পায়ের ফিমার দুর্বল হয়ে এসেছে। ফলে সন্তান গর্ভে ধারণ করার মতো শক্তি তারও নেই। তবুও শেষ চেষ্টা করে দেখা ছাড়া উপায় নেই। নাজিনের টিউমার অপারেশনের প্রক্রিয়া তাই ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত কি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা? আপাতত সেটাই প্রতীক্ষার বিষয়।
আরও পড়ুন
গণ্ডারের শিং কেটে নিচ্ছেন খোদ সংরক্ষণ কর্মীরাই!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মহামারীর মধ্যেও সুখবর, দক্ষিণ আফ্রিকায় গণ্ডারের চোরাশিকার কমেছে এক-তৃতীয়াংশ